আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্র প্রতারণার মাধ্যমে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৮৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপতৎপরতায় লিপ্ত বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। রাজশাহী নগর ভবনে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এ দাবি করেন।
তিনি জানান, কোরিয়ান কোম্পানি শিনশিন গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড তাদের দাবি করেছে যে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন তাদের কাছ থেকে ৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক কিনতে চেয়েছিল। এই ট্রাক না নেয়ায় ওই কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সম্প্রতি ওই কোম্পানির পক্ষ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা অবাক হয়ে যান। কারণ, এমন কোনো ট্রাকের অর্ডার তারা দেননি। এমনকি সিটি করপোরেশনে এ ধরনের ট্রাকের ব্যবহারও নেই। এসব ট্রাক ব্যবহার করে ফায়ার সার্ভিস।
বিষয়টি শুধু সিটি করপোরেশন আর শিনশিন কোম্পানির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছেও এ খবর পৌঁছায়।
রাষ্ট্রদূত ১১ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি পাঠান মেয়র লিটনের কাছে। এরপর তিনি জবাব পাঠান।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, ‘আন্তর্জাতিক একটি চক্র জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধমে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপতৎপরায় লিপ্ত। চক্রটি কৌশলে আমার পাসপোর্ট জালিয়াতি, ভুয়া ই-মেইল আইডি ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তার ভুয়া নাম, পদবি ও স্বাক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে কোরিয়ান শিনশিন গ্লোবাল কোম্পানির কাছ থেকে ৮টি ফায়ার ফাইটিং ট্রাক কিনে ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে চুক্তি করেছে বলে জানতে পেরেছি।
‘এই কোম্পানি তৃতীয় কোনো পক্ষ দ্বারা প্রতারিত হয়েছে, নাকি শিনশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির প্রেসিডেন্ট বাইয়ং চিওল শিন ও তার সহযোগীরা নিজেরাই বিভিন্ন ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে ফাঁসানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে, তা তদন্তে জানা যাবে।’
মেয়র বলেন, ‘আমার সঙ্গে ফোনালাপ কিংবা ই-মেইলে যোগাযোগ না করে ভুয়া ই-মেইলে যোগাযোগের মাধ্যমে চুক্তির বিষয়টি জানানোর পরও সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসে বি সি শিন একাধিকবার যোগাযোগ ও মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছেন। এতে আমার ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের গভীর অপচেষ্টা।’
লিটন আরও বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে যথাযথ নিয়ম মেনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য কেনা হয়। সরাসরি বিজ্ঞপ্তি ছাড়া বড় কোনো পণ্য সরবরাহকারীর কাছ থেকে কেনার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে ১০.১২ মিলিয়ন ডলারের (৮৫ কোটি টাকা) সরাসরি ক্রয়চুক্তি সরকারি ক্রয় নীতিমালা পরিপন্থি। তা বাস্তবসম্মতও নয়।
‘ডকুমেন্টে দেয়া ই-মেইল ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর আমার নয়। ডকুমেন্ট হিসেবে সংযুক্ত আছে পাসপোর্টের দুটি জাল পাতা। সেখানে দেয়া আমার নাম, পাসপোর্ট নম্বর, জরুরি নম্বর ও অন্যান্য তথ্য সঠিক নয়। পাসপোর্টে থাকা ছবিটিও নির্দিষ্ট মাপের নয়। আমার ছবিটি পোস্টার বা ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে পাসপোর্টে লাগানো হয়েছে। সুতরাং বি সি শিনের কথিত লেনদেনের দায় আমার বা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ওপর বর্তায় না।’
মেয়র জানান, বিষয়টির উল্লেখ করে ইতিমধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসেও রাসিকের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বিএ