রাজশাহী মহানগরীতে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যকে অপহরণ, প্রাণনাশের হুমকী ও চাঁদা আদায়ের অপরাধে প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় গ্রেফতারকৃত আসামীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া নগদ ৪৫ হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়।
আজ ২ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১ টায় আরএমপি সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী হলো মোঃ সায়েম উদ্দিন শ্যাম(৩৫)।
সে রাজশাহী মহানগরীর কাটাখালী থানার সমসাধীপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মোঃ গাজী সালাউদ্দিনের ছেলে। বোয়ালিয়া মডেল থানার হাদির মোড় নদীর ধার এলাকার মৃত দুলাল বিশ্বাসের ছেলে মোঃ পারভেজ(৩২), এয়ারপোর্ট থানার বায়া তেরিপাড়া গ্রামের মোঃ বাপ্পী হোসেনের স্ত্রী মোসাঃ রাজিয়া সুলতানা সুমা(৩০) এবং রাজপাড়া থানার বহরমপুর গ্রামের মোঃ মামুনুর রহমান বাবুর স্ত্রী মোসাঃ শরিফা আক্তার সাথী(২৭)।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মোঃ ইকবাল (৫৬) (ছদ্মনাম) একজন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স কর্পোরাল, বর্তমানে সে একটি প্রতিষ্ঠনের ডিজিএম এর গাড়ি চালক। তিনি গত ৩১ অক্টোবর ২০২১ নাটোর হতে শিরোইল বাস টার্মিনালে নেমে বাড়ি যাওয়ার জন্য অটোরিক্সায় উঠেন। এসময় আরো দুই জন মহিলা যাত্রী একই অটোরিক্সায় উঠে।
কিছুক্ষণ পর ঐ মহিলা যাত্রীরা ইকবালের হাতে ঠিকানা লেখা একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলে তারা রাজশাহীতে নতুন এসেছে, কিছু চেনে না তাই ঠিকানা মতাবেক পৌছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। ইকবাল সরল বিশ্বাসে আসামীদেরকে ঠিকানা অনুযায়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য অটোরিক্সা নিয়ে ঐতিহ্য চত্বরে আসলে পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ি আরো দুইজন আসামী সেই অটোরিক্সায় উঠে।
এবার তারা সকলে ইকবালকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শরিফা আক্তার সাথীর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে শরিফার সাথে ইকবালের জোরপূর্বক অশ্লীল ছবি তোলে। এরপর অপহরণকারীরা ইকবালের নিকট ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ ও চাঁদা দাবি করে। টাকা না পেলে এসকল অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকী দেয়।
তখন ইকবাল তার সম্মানের ভয়ে ব্যাগে থাকা স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেয় এবং ছবি গুলো প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন অপহরণকারীরা বলে ঠিক আছে আজকে ছেড়ে দিলাম কালকে আরও একলাখ টাকা নিয়ে আসবি, না আনলে কালকেই তোর ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিব এবং তোর বসকেও দিয়ে দিব যেন তোর চাকুরী না থাকে।
এ ঘটনায় ইকবাল নিরুপায় হয়ে ডিবি পুলিশকে মৌখিকভাবে অভিযোগ প্রদান করেন। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ আরেফিন জুয়েল এর সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) জনাব মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক জনাব মোঃ রেজাউল হাসান ও তার টিম আসামী গ্রেফতারের অভিযানে নামে।
পরবর্তীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ইকবালকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে আসামীদের অবস্থান সনাক্ত করে গত ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার বহরমপুর এলাকায় হতে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে অপহরণ করে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় চক্রের মূলহোতাসহ ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া নগদ ৪৫ হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জেএন