ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার চার সম্পাদকসহ সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ‘মিরপুর সম্মিলিত সাংবাদিক জোট’।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।
এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য এক্সাম্পল’ এর সম্পাদক মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় স্বনামধন্য সম্পাদক ও সাংবাদিকদের মামলার আসামি করা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয়।
এ ধরনের মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমসহ সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। এটা যেন দুর্গন্ধযুক্ত মানুষ মামলা করেছে ক্লিন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।
এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আর সেজন্যই আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান করছি।
নতুন বার্তা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে এবং তার প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন করছি। এটা নিয়েও আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সোজা ভাষায় বলি- আপনারা প্রোপাগান্ডা ছড়াবেন না। দালালি আর সাংবাদিকতা একসঙ্গে হয় না। আপনি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করতে পারেন, আর আমরা তা লিখলেই দোষ। আপনার সঙ্গে থাকলে সঙ্গী, না থাকলে জঙ্গি, এমনটা আপনি ভাবতে পারেন। কিন্তু সুষ্ঠু ধারার সাংবাদিক এটা ভাবে না।
প্রতিদিনের বাংলাদেশ প্রত্রিকার প্রতিবেদক কামরুল হাসান ভূঁইয়া সোহাগ বলেন, যারা সাংবাদিকদের ভুঁইফোড় বলে আখ্যায়িত করেন, আমাদের আজকের অবস্থান তাদের বিরুদ্ধে। সাংবাদিকদের কেউ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করলে আমরা বসে থাকবো না। তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
দৈনিক মাতৃজগৎ পত্রিকার সম্পাদক সেলিম খান বলেন, সংবাদপত্রকে কখনো হামলা-মামলা দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। এ মামলা প্রত্যাহার করে মামলাকারীদের ক্ষমা চাইতে হবে। যতদিন পর্যন্ত তারা মামলা প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইবে, ততদিন পর্যন্ত টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আয়োজনে রাজধানীর মিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ম. চঞ্চল মাহমুদ এ মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, দেশের শীর্ষ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য যারা এ মিথ্যা মমলা করেছেন, তাদের ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না। একইসঙ্গে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজকে বিতর্কিত না করার অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা।
আয়োজনের সভাপতি ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক অর্থ সম্পাদক আজিজুল হাকিম বলেন, দেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছেন না। তারই সুবাদে বিশিষ্ট ১১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে তা যেন সাংবাদিকদের আরও হেয় করার জন্য। আপনাদের এ ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবে না। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ মামলা প্রত্যাহার করে যদি ক্ষমা না চান, তবে আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মানববন্ধনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- মিরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রিপন, জাগো কণ্ঠের সম্পাদক মো. আলী মুবিন, সংবাদ মোহনার সিনিয়র রিপোর্টার মো. মোমিন, মুভি বাংলার স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদ, টুয়েন্টিফোর লাইভের প্রতিবেদক মোকলেস খান, দৈনিক সোনালী খবরের সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিয়া, প্রতিবেদক মো. দীন ইসলাম, দৈনিক অন্যায়ের চিত্রের যুগ্ম সম্পাদক এম.মনির হোসেন, দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিবেদক এনামুল হক ইমন, দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার প্রতিবেদক সাজেদুর রহমান সাজু, সিএনবিডির সম্পাদক এস এম ইমন, দৈনিক বাংলাদেশের সংবাদ পত্রিকার প্রতিবেদক বাহাউদ্দিন তালুকদার, প্রতিদিনের ডাক.কমের সম্পাদক মো. সোহাগ, দৈনিক উচ্চকণ্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদক রাকিবুল হাসান রনি, দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার প্রতিবেদক এস এম আর শহীদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম, গোলাম মর্তুজা পাপ্পু প্রমুখ। আয়োজন সমন্বয় করেন দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার এস এম জহিরুল ইসলাম।
মানববন্ধন থেকে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় চট্টগ্রামের আদালতে হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়।
এর আগে গত ১৮ আগস্ট কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সানের সম্পাদক ইনামুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজটোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম, বাংলানিউজের সম্পাদক জুয়েল মাজহার, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ৫০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের করা হয়।
এস/আর