রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানাধীন দাসপুকুর এলাকায় প্রায় দেড় বিঘা জমির দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে চলতি বছরের গত ৩০ জুন দুপুর ১২টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই পক্ষের ২ জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হন। এসব ঘটনা ঘটলেও ঘটনার পেছনে আরো ঘটনার তথ্য মিলেছে।
যার নেপথ্যে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মন, ওসি রাজপাড়া মাজাহার ও উপচারের সাজাপ্রাপ্ত আসামি কথিত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নুরে ইসলাম মিলন রয়েছে। এই জোড়া খুনের মতো নির্মম ঘটনার নেপথ্যে বর্তমানে একটি বিশেষ ঘটনা সামনে চলে আসতে শুরু করেছে। আর সেটি হলো, রাসিকের ৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার কামাল হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে দাবি করেছেন, আলোচিত জমির মালিক সেলিমকে ঠিকাদার হারুনের যোগসাজশে পুলিশ দিয়ে
গ্রেফতার করা হয় ও পরবর্তীতে তারই বুলড্রেজার দিয়ে জমির উপর স্থাপিত সেলিমের একটি দোকান গুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময়
পুলিশের একটি দল দাঁড়িয়ে থেকে এই বেআইনি কাজে সহযোগিতা করেছে। কাউন্সিলর কামালের বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অস্ত্র মামলার অন্যতম কারিগর এবং বোয়ালিয়া থানার ওসির সোর্স হিসেবে পরিচিত মিলনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অস্ত্র মামলা রুজুর আগে এই মামলার এক নম্বর আসামী সেলিমের সাথে নগরীর শিরোইল দোসরমন্ডলের মোড়ে অবস্থিত উপচার প্রত্রিকা অফিসে কয়েক দফা বৈঠক করেন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মিলন ও বোয়ালিয়া থানার ওসি। পরবর্তীতে ২৭ জুন বিকেল ৩টার পরে অস্ত্র উদ্ধার দেখানো।
বোয়ালিয়া থানার মামলা অনুযায়ী অস্ত্র ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে বর্নালী এলাকা থেকে
মামলার ২ নং আসামী রানার শপিং ব্যাগ তল্লাশী করে একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়। অথচ অস্ত্র মামলায় আটক রানার দেয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়েছে ২৮ জুন বিকেল ৫টায় পিস্তলটি রানা ওসি নিবারনের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর ওসি রানাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। রানা যথারীতি সেখান থেকে চলে যায় বলে জবানবন্দীতে উল্লেখ করা হয়েছে, যা রহস্যজনক।
রাজশাহীর বিশিষ্ট আইনজীবী মুন্না সাহার মতে, অস্ত্র আইনে দখলটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজাহার অনুযায়ী রানার হেফাজত থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার দেখানো হয়েছে। অথচ রানার জবানবন্দী অনুযায়ী অস্ত্রটি নিয়ে ওসি নিবারন তাকে ছেড়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে ৪ ঘণ্টা পর শাওন ও মিলন রানাকে ডাকলে পুলিশ রানাকে
আটক করে। প্রকতৃপক্ষে অস্ত্রটি যার হেফাজত থেকে পাওয়া যাবে তিনি আসামী। অন্যরা আসামী হওয়ার কথা না। এ ব্যাপারে মিলনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি খবর২৪ঘণ্টাকে বরেন, অস্ত্রের ভিডিওটি ফটো সাংবাদিক আসাদ ভাই আমাকে সরবরাহ করেছে।
ওই ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে সেলিম তার সাথে যোগাযোগ করে গ্রেপ্তার থেকে বাঁচার জন্য। মিলন বিষয়টি ওসি বোয়ালিয়াকে জানান। ওসি বোয়ালিয়া তাকে জানান, ঘটনাটি রাজপাড়া থানা এলাকায়। তারপরও যদি সেলিম অস্ত্র দেয় তবে আমি তাকে আসামী করবোনা। এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনারের সাথে ওসির কথা হয়েছে বলে মিলন খবর ২৪ ঘণ্টাকে নিশ্চিত করেছেন। মিলন জানান, তিনি সেলিমকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন। আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনায় দুটি মামলা রাজপাড়া থানায় দায়ের করা হয়েছে।
এরমধ্যে শফিকুল হত্যা মামলায় তার স্ত্রী হাবিবা কাকলি ৩১ জনের নামে এবং জয়নাল হত্যা মামলায় তার চাচা ও ৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার কামাল হোসেন বাদী হয়ে ১৯ জনের নামে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই দুই মামলায় আসামীর সংখ্যা ৫০ জন হলেও গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র ৫ জন। এদিকে, শফিকুল হত্যা মামলায় বাদী হাবিবা কাকলি অভিযোগ করেছেন, হত্যাকাণ্ডের দিন
রাজপাড়া থানা পুলিশের সামনে পুরো ঘটনা ঘটলেও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেছে। পুলিশ গাফিলতি করলে আরো বেশি মার্ডার হয়ে যেত। আসামী যারা ছিল তাদের পাওয়া যাচ্ছেনা। ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা বহুদিনের ঝামেলা ছিল বলে জানা গেছে। অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেফতারের ঘটনায় তিনি বলেন, যাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে সে
নিজেই স্বীকার করেছে। ঘটনাস্থল যেখানেই হোকনা কেন আরএমপি একটা পরিবার। কোন তথ্য পেলে পুলিশতো হানা দিবেই। অস্ত্রটি কোন জায়গা থেকে আনা হয়েছে তা তদন্ত করছি। মিলন নামে একটা ছেলে জড়িত ছিল আমরা ওকে খুঁজছি পাচ্ছিনা আমরা। রাজপাড়া থানা এলাকার ঘটনায় ওসি নিবারণ কি করে গেল গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে খবর২৪ঘন্টাকে তিনি বলেন, ঘটনার অনেক দিন পরে অনেক সাংবাদিক টেলিফোন করছে। এটার কোনো কারণ আছে কিনা আমি জানিনা। তদন্ত চলছে। প্রকৃত ঘটনা কি তা তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেএন