এবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন এর বিরুদ্ধে খোদ তার থানায় কর্মরত কন্সটেবল মনিরুল ইসলামকে কর্তব্যরত অবস্থায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কন্সটেবল মনিরুল (কন্সটেবল নং-১৪৪৬) এর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা রিতা ২৭ জুন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ কমিশনারের দপ্তর অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সেটি তদন্ত করছেন আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার ( হেডকোয়ার্টার) রশীদুল হাসান পিপিএম। ইতিমধ্যেই তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা খবর ২৪ ঘণ্টাকে নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজিয়া সুলতানা রিতা স্বামী কন্সটেবল মনিরুল ইসলাম ২০১৬ সাল থেকে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মুন্সী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ২৬ জুন বেলা ১১টার দিকে বোয়ালিয়া থানায় কর্মরত কন্সটেবল আফরোজা আক্তার (কং/৯৩৪), কন্সটেবল রাজিয়া সুলতানা (কং/৭০৮), কন্সটেবল মোস্তাক আহমেদ্দ (কং/১১৭৪) এর উপস্থিতিতে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন তার স্বামী মনিরুল ইসলামকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ প্রাণনাশের হুমকী প্রদান করে। তার হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং ভয়ভীতির আশঙ্কায় কন্সটেবল মনিরুল শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ওসির গাড়ীতে করে রাত ১০ টার দিকে তাকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী পুলিশ
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক তার স্বামীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন ও বাড়িতে তিন দিনের বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। তার স্বামী সুস্থ হতে পারেননি ও প্রাণনাশের হুমকির ভয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ সংক্রান্তে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। জিডি নং-১৪৩৪। তাই তিনি তার স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার কারণে বোয়ালিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে সুষ্ঠ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
কন্সটেবল মনিরুল ইসলাম খবর ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, আমি থানায় মুন্সী হিসেবে কর্মরত আছি। মামলা তদন্ত করেন অফিসাররা। কোনো ভুল হলে তারা করেন সেটার দায়ভারতো আমার নয়। কিন্ত ওসি স্যার অকারণে আমাকে অকথ্য ভাষায়
গালিগালাজ করেন। মারধর করতেও উঠে। ২৬ জুনেও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক ৩ দিনের বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেয়। সুস্থ না হতে পারার কারণে আবার আমাকে ৩ দিনের বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওই ঘটনার পর আমি আর সুস্থ হতে পারছিনা। আশঙ্কা কাজ করছে। ওসি সাহেব শুধু আমাকেই নয় থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সাথেও খারাপ আচরণ করে ও মারতে উঠে। এ নিয়ে থানায় অন্যান্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্যারদের কাছে। আমি মুখ বুঝে সহ্য করলেও আমার স্ত্রী আমার শারীরিক অবস্থা দেখে চুপ থাকতে পারেনি তাই অভিযোগ দিয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-
পুলিশ কমিশনার (সদর) রশীদুল হাসান (পিপিএম) বলেন, বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসির বিরুদ্ধে কন্সটেবল এর স্ত্রীর করা অভিযোগটি তদন্তের জন্য আমার কাছে এসেছে। সুষ্ঠভাবে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়া হবে।
এদিকে, নাম না প্রকাশ করার শর্তে বোয়ালিয়া থানার এক পুলিশ সদস্য বলেন, থানায় যোগদান করার পর থেকেই ওসি তার অধীনস্থদের সাথে খারাপ আচরণ করে। যাকে তাকে মারতে উঠে। এনিয়ে প্রচুর ক্ষোভ রয়েছে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনা। বিষয়টি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা উচিত। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, শুধু পুলিশ কন্সটেবল এর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা রিক্তায় নয় বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ একাধিক মানুষের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলো তদন্ত হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ওসি।
রাজশাহীর সিনিয়র সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটন ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসির বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনারের কাছে তাকে ওসি কর্তৃক প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ দেন। অভিযোগটি তদন্ত করেন আরএমপির শাহমখদুম জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তদন্ত রিপোর্ট শক্তভাবে দেয়া হলেও এখনো সাংবাদিক ছোটন তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার ন্যায্য বিচার পাননি বলে জানান।
সিনিয়র সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটন খবর ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, বোয়ালিয়া থানার ওসি আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এরপর আমি পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। তদন্ত রিপোর্ট শক্তভাবে দেওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত বহাল তবিয়তে আছেন ওসি। আমি ন্যায্য বিচার পাইনি। এভাবে প্রশাসন চলতে পারেনা। আমি আবারো ন্যায্য বিচার দাবি করছি।
চলতি বছরের মার্চ মাসে সারদা পুলিশ একাডেমীতে কর্মরত নারী পুলিশ পরিদর্শক হোসনেয়ারা পুতুল বোয়ালিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে তাকে কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের এখনো কোনো কুল কিনারা হয়নি বলে তিনি খবর ২৪ ঘণ্টাকে জানিয়েছেন। তার প্রতি প্রতিহিংসার কারণেই তার স্বামীকে জামাত-শিবির বানিয়ে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করার অভিযোগ তোলেন ওসির বিরুদ্ধে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ পরিদর্শক হোসনেয়ারা পুতুল বলেন, আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তুলে পুলিশ কমিশনার স্যারের কাছে অভিযোগ করেছি। এখনো সেটার
কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি। তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। লকডাউনের কারণে ঢাকায় যেতে পারছিনা। লকডাউন শেষ হলে ঢাকায় গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে অভিযোগ দিব ও আইজিপি স্যারের সাথে সরাসরি দেখা করে অভিযোগ দিবো। রাজশাহীতে আমি ন্যায্য বিচার পাবোনা বলে আশঙ্কা করছি।
নগরীর শিরোইল মঠপুকুর এলাকার মৃত ইব্রাহিম দেওয়ানের মেয়ে তাজনুভা তাজরিন বোয়ালিয়ার ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। সেটারো কোনো কুল কিনারা হয়নি।
তাজনুভা তাজরিন খবর ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, আমি এ পর্যন্ত পুলিশ কমিশনার স্যার এর কাছে ৩টি অভিযোগ করেছি। কিন্ত কোনোটার সুরাহা হয়নি। লকডাউনের কারণে ঢাকা যেতে পারছিনা। লকডাউন শেষ হলে ঢাকায় গিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের অবহিত করে ন্যায্য বিচার চাইবো। এছাড়াও আরেক নারী সম্প্রতি ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন। এভাবে একের পর এক অভিযোগ ও বিভাগীয় মামলা থাকার পরেও কিভাবে
তিনি থানায় ওসিগিরি করেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরএমপির এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ কমিশনার স্যারের অধিনে সমস্ত কর্মকর্তা। আমরা কেউ পরিদর্শক পদমর্যদার কারো বদলি বা ব্যবস্থা নেয়ার কর্তপক্ষ নই। কিভাবে এখানো তিনি আছেন তা আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, ২৬ তারিখ এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার সাথে আমার দেখা হয়নি। সে পান খায়। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আমি চিকিৎসা করিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সত্য নয়। কন্সটেবল মনিরুল কাজে ভুল করে। সে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে অন্যজনকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তাকে গালিগালাজ করা হয়নি।
আর/এম