শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরের সুখানগাড়ী নজীরুন আজিজুল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। এরপরও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে সব কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে। সেইসঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলছে অস্তিত্বহীন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর এই কার্য সম্পন্ন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ চারজন কর্মকর্তার স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র। শুধু এই স্বতন্ত্র মাদ্রাসাই নয়। এমন ১১ টি অস্তিত্বহীন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সন্ধান মিলেছে উপজেলায়। ঘটনাটি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি শেরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমানের যৌথ স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগে জানা যায়, সম্প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার তথ্য চাওয়া হয়। সে মোতাবেক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে এই উপজেলার মোট ৪৫টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার তথ্য সম্বলিত সকল কাগজপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের
সুখানগাড়ি গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে নুরুল ইসলাম, একই ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের আব্দুল আলিম ও খানপুর ইউনিয়নের খাগা গ্রামের ফরিদুল ইসলামের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সংঘবদ্ধ চক্র স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নিয়ে বাণিজ্যে মেতে ওঠেন। কোনো অস্তিত্ব নেই এমন এগারোটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কাগজপত্রও তৈরী করেন তারা। সেগুলো হলো- বিরইল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, মির্জাপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, রাজবাড়ী মুকুন্দ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, হলদিবাড়ি স্বতন্ত্র
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, ভবানীপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, শঠীবাড়ি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, তালপুকুরিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, আটমিনসা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, খাগা শাহেরা মোসলেম স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও মধ্যভাগ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে। এমনকি অস্তিত্বহীন ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সহজ-সরল ব্যক্তিদের নিকট থেকে অন্তত ত্রিশ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এসব
টাকা হালাল করতে স্বতন্ত্র মাদ্রাসার তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ, সাবেক উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি), মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজমুল হকের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া কাগজপত্র মন্ত্রণালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির নেতা আবু রায়হান অভিযোগ করে বলেন, চিহিৃত ওই সংঘবদ্ধ চক্রটি এহেন কর্মকাÐ
করেই চলেছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে করে চক্রটির কবলে পড়ে সাধারণ নিরীহ অনেক লোকজন প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। কিন্তু এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম বলেন, আমি নিজেও একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। তাই জাল স্বাক্ষর ও কাগজপত্র তৈরী করে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা গড়ে তোলার প্রশ্নই আসে না। তাই তিনি ওই ধরণের কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত নেই বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
এদিকে বিগত দুই সপ্তাহ আগে ওই অভিযোগটি তদন্তে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পাশাপাশি তিন কার্যদিবসের মধ্যে ওই তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু একমাস পার হতে চললেও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, এই জালিয়াত চক্রের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সখ্যতা রয়েছে। এই অফিসের দু-একজন ব্যক্তিকে ম্যানেজ করেই এহেন
কর্মকা চালিয়ে যাচ্ছে ওই চক্রটি। তাই সবকিছু জেনে-বুঝেই নিশ্চুপ রয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজমুল হক বলেন, তদন্তের বিষয়ে কোনো নির্দেশনার চিঠি পাননি তিনি। তাই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি এই কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তবে অদ্যবধি তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাইনি। তদন্তে তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেএন