আজহারুল ইসলাম বুলবুলঃ প্রশাসনের অভিযানের পরেও রাজশাহীর দুর্গাপুরে উপজেলা জুড়ে আবাদী জমিতে অবৈধ পুকুর খননের নামে চলছে অরাজকতা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক দেখানো এক ঘেয়েমি অভিযান পরিচালনা করলেও এখনো অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছেন পুকুরখনন দস্যুরা। এতে ফসলী জমি কমে যাওয়ায় শষ্য উৎপাদন মারাত্মক ভাবে হুমকিতে পড়ছে। অপর দিকে অবৈধ পুকুর খননের মাটি বোঝায় ট্রাক্টরে রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। আর এই প্রবনতা মারাত্মক আকার ধারন করেছে পুরো উপজেলা জুড়ে ।
অভিযোগ উঠেছে বিঘাচুক্তি মাসোহারা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অলিখিত অনুমতিতে ফসলি জমিগুলো পুকুরে পরিনত করা হচ্ছে । এছাড়াও মোটা অঙ্কের লেনদেনের বিনিময়ে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা মৌসুমের কোকিলরা জমি দিতে না-রায কৃষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন এমন সত্যতা পাওয়া গেছে । তবে ভুক্তভোগি কৃষকরা অভিযোগ করলে তা আমলে নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। বাধ্য হয়ে ৩ ফসলি জমিগুলো পুকুরখনন দস্যুদের জিম্মায় ছেড়ে দিতে হচ্ছে কৃষকদের । পাশাপাশি সরকারের খাস খতিয়ানভূক্ত জমিও পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহায় পাচ্ছে না অভিযোগ উঠেছে । ফসলি জমি উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বিকার ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ করছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক শ্রেণীর ভেকুমেশিন দালাল, পুকুরখনন কারীচক্র ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-পাতি নেতাদের যোগসাজসে, কৃষকদের ফসল চাষের বদলে বড়বড় পুকুরের মালিক বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে। এবং লীজ প্রক্রিয়া চালু করে জমির মালিকদের বোকা বানিয়ে ফসলী জমিতে (স্কেভেটর) ভেকুমেশিন দিয়ে গভীর করে জমির চারদিকে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে প খননের নামে অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছেন পুকুর দস্যুরা। এ উপজেলায় রাত-দিন বিরতিহীন ভাবে পুকুর খনন করে সেই মাটি বিভিন্ন ইট ভাটাসহ ভরাট কাজে বিক্রি করছে দেদারসে । মাটিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর উপজেলার প্রধান সড়কসহ গ্রামীন রাস্তা গুলোর বেহাল অবস্থা সৃষ্টি করছে। এতে পথচারীদের জন্য রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
আর এসব দেখেও পুকুরখনন দস্যুদের অর্থের লোভে পড়ে প্রশাসন অন্ধের মত ভুমিকা পালন করছে। যা উপজেলাবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের কারন হয়ে দাড়িয়েছে।
সরেজমিন দেখাযায়, দুর্গাপুর উপজেলায় ১টি পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নের ফসলের মাঠজুড়ে মহামারী আকারে অবৈধভাবে পুকুরখনন চলছে….পৌরসভার রৈপাড়া বিলে ,বরিদ বাশাইল বিলে, মাড়িয়া ইউনিয়নের মাড়িয়া, হোজা বিলে, পানানগর ইউপির, নারায়ণপুর, সেখপাড়া বিলে, ডাঙ্গিরপাড়া, গোপিনাথপুর বিলে, ঝালুকা ইউনিয়নের চৌপুকুরিয়া ওয়াজেরমোড়, আমগাছি বিলে,পালাশবাড়ি বিলে, জয়নগর ইউপির কানপাড়া, গগনবাড়িয়া ও যুগিশোতে দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নের তরিপতপুর ও জাগিরপাড়া, বিলে, নামুদরখালি ও আংরার বিলে,নওপাড়া ইউপির, আলিপুর, পকেটখালি মোড়, পালসা বিলে, গোপালপুর ও নান্দিগ্রাম বিলে, কিশমত গনকৌড় ইউনিয়নের, আড়ইল বিলে, কয়ামজামপুর, তেবিলা, রাতুগ্রাম ভবানিপুর তেকাটিয়া বিলসহ অন্যান্য ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় আবাদি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। ফসলি জমিতে খননের প্রক্রিয়ায় আছে আরো প্রায় ৪ শতাধিক পুকুর ।
দুর্গাপুরে উপজেলায় ভেকু মেশিন (স্কেভেটর) সরবরাহ দালাল চক্রের মধ্যে রয়েছেন যারা… চিটাগাং থেকে আসা অন্যতম ভেকুমেশিন দালাল মোশারফ সে কয়েক বছর ধরে আখের গুঁজিয়েছে ধরমপুর বাজার এলাকায়, ঢাকা আমিন বাজার থেকে আসা ছলিম সে অবস্থান করছেন দেবিপুরে, এছাড়াও নারায়ণপুরের মহিদুল, কিশমত গনকৌড় ইউপির, হাফিজ, কয়ামজামপুরের জাহাঙ্গীর,সাবদুল নান্দিগ্রামের আমিন, ঝালুকা ইউপির, মান্নান, ও রুহুল, নওপাড়া ইউপির পালসার ইসলাম, আলিপুরের ফিরোজ, নামুদরখালি বিলে পুকুর খনন করছেন আওয়ালসহ রয়েছে আরো বেশ কিছু ভেকুমেশিন দালালরা।
রৈপাড়া গ্রামের আলাল বলেন, নতুন রাস্তায় রোদে ধুলোয় মাখামাখি হচ্ছে আর বিকেল থেকে মাছবাহী ট্রাকের পানি পড়ে রাস্তা গুলো কাঁদায় পরিনত হচ্ছে। বিশেষ করে করে মোটরসাইকেল আরোহীর জন্য মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে রাস্তা গুলো। সরকার কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা করছে আর পুকুরখনন দস্যুরা নষ্ট করছে। কি আজব দেশরে বাবা যেন বলার মত কেউ নেই।
দেলুয়াবাড়ি ইউপির (অবসরপ্রাপ্ত) একজন স্কুল শিক্ষক দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও সড়কের বারো অবস্থা বলে লাভ কি? সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, আর এই বিবেক যখন বিক্রি হয়, তখন বলার কিছুই থাকে না।
দুর্গাপুর সহকারী ভুমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) শুভ দেবনাথ বলেন, অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধে অভিযান অব্যহত রয়েছে। তবে অভিযানে ব্যর্থতার কারন জানতে চাইলে সদুত্তর মিলেনি তার কাছ থেকে।
জানতে চাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহসিন মৃধাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, অবৈধভাবে পুকুর খনন ও মাটিবহনে রাস্তায় দুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এস/আর