বিশেষ প্রতিবেদক,খবর২৪ঘন্টা: ঢেলে সাজানো হচ্ছে পর্যটন জেলা খ্যাত কক্সবাজার জেলা পুলিশকে। এ লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১৩৪৭জনকে বদলি করা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জেলার ১৩০৯ জন পুলিশকে বদলি করা হয়েছে। এর আগে জেলার পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ জেলার শীষ কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়। এক সঙ্গে জেলা পুলিশের এত সদস্য বদলি এটিই প্রথম। জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সদরদপ্তর প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে।
আগামি সপ্তাহ নাগাদ বদলির প্রক্রিয়া শেষ হবে। আর এ নতুন যোগদানকৃত পুলিশ সদস্যদের দিয়ে চালানো হবে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পর আলোচিত জেলার প্রায় সকল পুলিশকে বদলি করা হচ্ছে।
জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, শুক্রবার পর্যন্ত এই বদলির সংখ্যা দাঁড়িয়ে ১৩৪৭ জন। এর মধ্যে রয়েছে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ শীর্ষ ৮ কর্মকর্তা, ৮ থানার ওসিসহ ৩৪ পরিদর্শক, ১৫৮ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৯২ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), ১০৫৫ জন নায়েক ও কনস্টেবল। সবাইকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাইরে ভিন্ন রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
পুলিশ স‚ত্র জানিয়েছে, বদলি হওয়া শ‚ন্য পদ পূরণে শুক্রবার চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যোগ দিচ্ছেন ৮ থানার ওসিসহ ৩৭ জন পুলিশ পরিদর্শক, ৮৫ জন এসআই-এএসআই ও ৭৩৪ জন কনস্টেবল। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশে সম্প‚র্ণ নতুন জনবল যোগদান করবে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। আর ঝিনাইদহের এসপি মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নবাগত এসপি বুধবার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার এসপি মাসুদ হোসেন কক্সবাজার থেকে বিদায় নেন। পরে ২১ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারসহ অপর ৭ শীর্ষ কর্মকর্তাকে। আর বৃহস্পতিবার রাতে ৮ থানার ওসিসহ ৩৪ পরিদর্শককে বদলি করা হয়।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, কক্সবাজার জেলা দিয়ে বিশেষ ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। এরই অংশ হিসেবে তিনি কক্সবাজার জেলায় কর্মরত সব পুলিশ সদস্যকে এ জেলার বাইরে এবং তাদের স্থলে অন্য জেলার পুলিশ সদস্যদের পদায়নের সিদ্ধান্ত নেন।
কীভাবে সততা ও স্বচ্ছলতার সঙ্গে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্বপালন করতে হবে এ ব্যাপারে আইজিপি তাদের দিক নির্দেশনা দেন। তাদের মরণনেশা ইয়াবার বিরুদ্ধে জোরাল ভ‚মিকা পালন করতেও নির্দেশ দেন আইজিপি। ইয়াবা বিকিকিনির সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িয়ে পড়লে তার পরিণতি কী হতে পারে এ বার্তাও দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
অন্যদিকে দেশে এক জেলায় একসঙ্গে এত পুলিশ সদস্য বদলির ঘটনা এটিই প্রথম। এর আগে কোন ঘটনায়একসঙ্গে এত কর্মকর্তা বদলির ঘটনা ঘটেনি। মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পর জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সদরদপ্তরের গৃহিত এটি একটি অনেক বড় পদক্ষেপই বলছেন অনেকেই।
সদ্য যোগদানকৃত কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশের এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল মিলে ১৩০৯ জনের বদলির আদেশ এসেছে। পুলিশ সদর দফতর এবং পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ থেকে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই আদেশ জারি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট যারা থাকবেন তাদেরও বদলি করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, পুলিশ সদরদপ্তরের থেকে প্রেরিত সকল আদেশ অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে। আর এর জন্য কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করা শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাইকে বদলি করা হচ্ছে ।
তিনি বলেন, জেলায় পুলিশের সুনাম ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সকল কিছুইকরা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে এখনো অভিযান চলমান রয়েছে। তবে নতুন পুলিশ সদস্যরা যোগদান করলেএটি আরো জোরদার হবে।
এদিকে পুলিশের কর্মকর্তা বলছেন, পর্যটন খ্যাত এ জেলার পুলিশের সুনাম ফিরিয়ে আনতে যা যা করনীয় সবই করা হবে। এ জেলায় কর্মরত পূর্বের সকল সদস্যকে বদলি করা হবে। নতুন ও চৌকস অফিসার দিয়ে জেলা পুলিশের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কোন ধরনের অপ্রিতিকর কাজে জড়িত থাকার কোন অভিযোগ পেলেসঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবার প্রবেশদ্বার হিসেবে চিহ্নিত কক্সবাজারে যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে যারা শেল্টার দেয় তাদের বিরুদ্ধেওঅভিযান হবে।
জানা গেছে, আগামি সপ্তাহ নাগাদ বদলি প্রক্রিয়া শেষ হবে। এরপর নতুন সদস্যদের নিয়ে পুলিশের বিশেষ সভা হবে। পুলিশের ওই সভা থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের নির্দেশ আসবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ রোডে বাহারছড়া পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনার পর কক্সবাজার জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নেয় পুলিশ সদর দফতর। ওই ঘটনায় মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ারের দায়ের করা হত্যা মামলায় টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১১ জন পুলিশ সদস্য জেল হাজতে রয়েছেন।
খবর২৪ঘন্টা/নই