খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বুথিডং টাউনশিপে হামলা চালিয়েছে সেনাবাহিনী। গ্রামবাসীকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম ইরাবতি খবর দিয়েছে, গুলি করতে করতে ২০০ সেনাসদস্য বুথিডংয়ে প্রবেশ করে। আরাকান আর্মির হামলার জবাব দিতেই সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে প্রবেশ করে। ওই সশস্ত্র সংগঠনের দাবি, সেনাবাহিনী গ্রামের কাছে ৭০টি শেলিং করেছে।
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবি তুলে প্রায় এক দশক আগে শুরু হয় আরাকান আর্মির সাংগঠনিক উদ্যোগ। নিজেদের ইতিহাস আর সংস্কৃতিকে সামনে আনতে চায় রাখাইন নৃগোষ্ঠীর (আরাকানি) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই সংগঠন। কারও ধারণা, এই মুহূর্তে তাদের সদস্য সংখ্যা তিন হাজার। কেউ আবার মনে করেন, ৭ হাজার সেনা রয়েছে তাদের। ৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে মিয়ানমারের বর্ডার পুলিশের ফাঁড়িতে হামলা চালায় আরাকান আর্মির সদস্যরা। হামলায় ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত ও অপর ৯জন আহত হয়। এরপর প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বিবৃতিতে সশস্ত্র ওই গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। জোরালো হয় সেনা-আরাকান আর্মি সংঘাত।
গ্রামবাসীদের একজন কো মং তের সংবাদমাধ্যম ইরাবতিকে জানিয়েছেন, ২৮ জানুয়ারি (সোমবার) পাহাড়ের এক পাশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে আরাকান আর্মি হামলা চালায় তার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর ২০০ সদস্য উপস্থিত হয় গ্রামটিতে। কিন্তু আরাকান আর্মি তাদের ওয়েবসাইটে দাবি করেছে, সোমবারে শুরু হওয়া সংঘর্ষের আগেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী (তাতমাদাও) গ্রামটিতে হামলা চালিয়েছিল। থা মি লা নামের অপর একটি গ্রামও সেনাবাহিনীর হামলার স্বীকার হয়েছে। রাখাইনের ওন চং গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই নারী ইরাবতিকে জানিয়েছেন, পরে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্যরা গ্রামে অবস্থান নেয়। রাতে তারা গ্রামবাসীদের বাধ্য করে ঘরে থাকতে দিতে। কেউ হতাহত না হলেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শেলিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘর-বাড়ি।
আরাকান আর্মির ভাষ্য, সেনাবাহিনী এলোপাথাড়ি ৭০ রাউন্ড গোলা নিক্ষেপ করেছে গ্রাম সংলগ্ন বনভূমি এলাকায়। ফলে বেশ কয়েকটি শেল বিস্ফোরিত হয়েছে গ্রামের কাছে পাহাড়ের ওপর। কো মং শিউ আয়ে, উ মং কিয়াও এবং উ মিয়াত থেইন তুন নামের তিন জনকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত অপর আরেকজন হচ্ছেন স্কুল শিক্ষক থান উইন চে।
ওন চং গ্রামের দুইজন নারী নাম গোপন রাখার শর্তে ইরাবতীর সঙ্গে ফোনালাপে বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোঁড়া শেল তাদের গ্রামের কাছে বিস্ফোরিত হয়েছে। এতে কোনও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও কিছু স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। সেনাবাহিনী গুলি চালাতে চালাতে ঢুকেছিল তাদের গ্রামে। গুলির খোসা ছড়িয়ে ছিল চারপাশে। শিশুদের ক্ষতি হবে ভেবে সেগুলো পরিষ্কার করেন একজন ভিক্ষু।
সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের ১০০ জনের মতো সদস্য গ্রামেই অবস্থান নিয়েছিল। রাতে বাহিনীর সদস্যরা গ্রামবাসীকে বাধ্য করে তাদেরকে ঘরে থাকার জায়গা দিতে। সংশ্লিষ্ট নারীরাই নিশ্চিত করেছেন, শিক্ষক মং শিউ আয়েকে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ইরাবতি বুধবার পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি, আটক অপর শিক্ষককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কি না।
গ্রামে সেনাবাহিনীর চালানো হামলার বিষয়ে কথা বলতে ইরাবতি সেনাপ্রধানের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুনকে কয়েকবার ফোন করেও যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন