নরসিংদীতে পারিবারিক বিরোধের জেরে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার দায়ে স্বামী ফখরুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসির) দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক শামিমা পারভিন এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে একই সঙ্গে আসামিকে আরও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত ফখরুল ইসলাম নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া সঙ্গীতা এলাকার মো. সাইফুল্লার ছেলে।
তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে পারিবারিকভাবে পৌর শহরের দত্তপাড়া এলাকার পারভেজ মিয়ার মেয়ে রেশমীর সঙ্গে ঘোড়াদিয়া সঙ্গীতা এলাকার মো. সাইফুল্লার ছেলে ফখরুলের বিয়ে হয়।
বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন রেশমীর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালাতো। ফখরুলের চাকরি না থাকায় প্রায় সময় রেশমীর কাছে টাকা পয়সা চাইতো, টাকা না দিলে রেশমীকে মারধর করতো। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান। কিন্তু নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে শহরের ঘোড়াদিয়ার সঙ্গীতা নিজ বাড়িতে স্ত্রী রেশমী আক্তার (২৬) ও তার দেড় বছরের শিশু সন্তান ফাহিম মাহমুদ সালমান সাফায়াতকে গলা কেটে হত্যা করেন। হত্যার পর অভিযুক্ত ফখরুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
হত্যার বিষয়টি টের পেয়ে ফখরুলের বড় ভাই শরীফ ধাওয়া দিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় ব্রাহ্মন্দী এলাকা থেকে তাকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করেন। হত্যার ঘটনায় নিহত রেশমীর বাবা পারভেজ মিয়া বাদী হয়ে মেয়ের জামাই ফখরুল ইসলামকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
দীর্ঘ দেড় বছর মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে হত্যার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক শামিমা পারভিন হত্যা মামলার একমাত্র আসামি ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন নরসিংদী জজ কোর্টের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এ পি পি) অ্যাডভোকেট এম এন অলিউল্লাহ, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান। আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট রোজিনা আক্তার।
মামলার আইনজীবী নরসিংদী জজর্কোটের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ১৩ কার্য দিবসের মধ্যে মামলা শেষ হয়েছে। মামলায় ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
আমরা আসামির সবোর্চ্চ শাস্তি দাবি করেছি। আদালত সব সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আসামিকে মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসির) দেন। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা মনে করি মামলার বাদী স্বল্প সময়ের মধ্যে সঠিক বিচার পেয়েছেন।
বিএ/