সরকারদলীয় হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর আলোচনায় আসেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। রেওয়াজ অনুযায়ী সব ঠিক থাকলে আগামী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।
সেই রেশ ধরেই তার গুলশানের বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। বাসভবনের আশপাশে অবস্থান দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।
এ ছাড়াও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বাসা-সংলগ্ন সড়কেও যান চলাচল।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান শাখার ডিসি আবদুল আহাদ জানান, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন এ তথ্য জানার পর তার বাসায় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজের সই করা মনোনয়নপত্র জমা দেন সাহাবুদ্দিন।
মনোনয়নপত্র জমার আনুষ্ঠানিকতা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিনকে মনোনীত করেছেন।
সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছে।
মনোনয়নপত্র যাচাই হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি। সংসদ ভবনে ভোটগ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। অবশ্য রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে ভোটের প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনেই একক প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
সংবিধান অনুয়াযী, রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে আগামী ২৪ এপ্রিল। পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী, তার আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে নতুন কাউকে দেখা যাবে তার জায়গায়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ১৮তম ব্যক্তি হিসেবে সাহাবুদ্দিন আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যেই ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন সাহাবুদ্দিন আহমদ। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল।
উল্লেখ্য, পাবনার সন্তান সাহাবুদ্দিনের জন্ম ১৯৪৯ সালে। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশনথ গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাবুদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য। সুত্র-আরটিভি
বিএ/