খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক :
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৭ রান তোলেন মুশফিকুর রহিম। তবে ভালো খেলতে থাকা মুশফিক নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ২৪ রানে যুজভেন্দ্র চাহালের বলে মোহাম্মদ শামির কাছে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৩ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ১২১ রান করেছে বাংলাদেশ।
এর আগে তামিম ইকবালের সঙ্গে ভালো জুটি গড়ার পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গেও ৩৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সৌম্য সরকার। উইকেটে থিতু হওয়া এই ওপেনার অবশ্য ১৬তম ওভারে নিজেকে আর টিকিয়ে রাখতে পারলেন না। দলীয় ৭৪ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দেন তিনি। মাঠ ছাড়ার আগে ৩৮ বলে ৩৩ রান করেন সৌম্য।
উদ্বোধানী জুটিতে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ৩৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন তামিম ইকবাল। তবে ১০ ওভারে মোহাম্মদ শামির বলে ইনসাইডেজ বোল্ড হলে নিজের ইনিংস আর বড় করতে পারেননি তামিম। ৩১ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ২২ রান করেন এই বাঁহাতি।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) এজবাস্টনে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি।
রোহিত শর্মার রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি ও লোকেশ রাহুলের ৭৭ রানের ইনিংসে ভর করে ৩১৪ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। তবে ভারতীয় ইনিংসের শুরুটা যেমন বিধ্বংসী হয়েছিল তাতে আরও বড় লক্ষ্যই হয়ত পেত বাংলাদেশ। কিন্তু বল হাতে দাপট দেখিয়ে কোহলিদের সেই লক্ষ্য দিতে দেননি মোস্তাফিজ-সাকিবরা। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ৫ উইকেট দখলের কীর্তি গড়েছেন ‘ফিজ’। শেষ ওভারে ৩ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। আর তাতেই ভারতের শেষটা আশানুরূপ হয়নি।
ইনিংসের ৪.৪ ওভারে রোহিত শর্মাকে সাজঘরে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু ক্যাচ ছেড়ে সেই সুযোগ নষ্ট করেন তামিম ইকবাল। সেই ভুলেরই মাশুল গুনতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ব্যাট হাতে রীতিমত ঝড় তুলেছেন রোহিত। আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলও ফিফটি হাঁকিয়ে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন। দুজনের জুটিতে এসেছে ১৮০ রান।
সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রোহিত নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডে এখন তিনি যৌথভাবে শীর্ষে আছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা ৪ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন লঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারকে (৫১৬) ছাড়িয়ে চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এখন রোহিত (৫২১)।
দুর্দান্ত শুরুর পর পথ হারায় ভারত। শুরুটা করেছিলেন সৌম্য সরকার। সেঞ্চুরি হাঁকানো রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দেন এই পার্ট-টাইম বোলার। এরপর ১৫ রান যোগ হতেই রুবেল হোসেনের বলে বিদায় নেন আরেক ভারতীয় ওপেনার লোকেশ রাহুল (৭৭)। মোস্তাফিজ জাদু তখনো বাকি।
‘কাটার মাস্টার’ মোস্তাফিজের ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলেই বিদায় নেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। শর্ট বল পেয়েই হাঁকিয়ে বসেন কোহলি, কিন্তু বলটা ছিল কাটার। আর তাতেই মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন কোহলি (২৬)।
এক বল বিরতির পর মোস্তাফিজের গুড লেন্থের কাটারে পরাস্ত হন হার্দিক পান্ডিয়া। তার ব্যাটের কানায় লেগে বল স্লিপে থাকা সৌম্য সরকারের হাতে জমা হয়। ২৩৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত।
২৩৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারতকে বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতীয় মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ঋষভ পান্ত। তবে তার ৪১ বলের ৪৮ রানের ঝড় থামিয়ে দিয়েছেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। স্লগ সুইপ খেলতে চেয়েছিলেন পান্ত, কিন্তু স্কয়ারে থাকা মোসাদ্দেকের সহজ ক্যাচে পরিণত হন। পান্তের ইনিংসটি ৬ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো।
চলতি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সুযোগ পাওয়া ভারতীয় ব্যাটসম্যান দীনেশ কার্তিক মাত্র ৮ রানেই মোস্তাফিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন। তবে অপরা প্রান্তে ধোনি রানের চাকা সচল রাখেন। কিন্তু তাকে বড় শট খেলতে দেননি টাইগার বোলাররা। শেষে চাপে পড়েই ৩৩ বলে ৩৫ রানের মাঝারি এক ইনিংস খেলে তিনিও শিকার হন মোস্তাফিজের।
ধোনির বিদায়ের পর মোস্তাফিজের করা শেষ ওভারেই রান আউট হয়ে বিদায় নেন ভুবনেশ্বর কুমার। শেষ বলে মোহাম্মদ শামিকে বোল্ড করে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন মোস্তাফিজ। এর আগে আফগানদের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন সাকিব।
শেষ ৬ ওভারে মাত্র ৩৭ রান তুলতে পারে ভারত। এই সময়ে উইকেট হারিয়েছে ৫টি। ম্যাচে বাংলাদেশ শুরুতে ব্যাক ফুটে থাকলেও শেষটায় এমন দারুণ ঘুরে দাঁড়ানোর ফলেই সাড়ে তিনশ রানের কোটা পার হতে পারেনি ভারত। আর এই সময়ে বল হাতে বাংলাদেশের আসল নায়ক মোস্তাফিজ। পান্তকে তুলে নিয়ে পার্শ্ব-নায়ক সাকিব।
এস/আর