১৭ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি
মালয়েশিয়া সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১৬ হাজার ৯৭০ কর্মী দেশটিতে যেতে পারেননি বলে তথ্য দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
রোববার (২ জুন) বিকেলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, গত ৩১ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ জনকে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে বিএমইটি থেকে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়া গেছেন। সেই হিসাবে ১৬ হাজার ৯৭০ জনের কম-বেশি যেতে পারেননি।
প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা যেতে পারেননি সেই কারণ খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটি সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট এবং সুপারিশ দেবে। আমি বিশ্বাস করি যারা এর জন্য দায়ী হবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন জানান, ২৪ মে’র পর থেকে যাদের টিকিট ছিল শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কাউকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠানোয় অনিয়মের অভিযোগে ২০০৯ সালে প্রথম দফায় বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এরপর ২০১৬ সালের শেষে খোলা হয় বাজারটি। তখন বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি চক্র গড়েছিল। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আবার বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।
চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে দেওয়া হয়। গত মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, দেশটি আপাতত আর বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ থেকে শ্রমিক নেবে না।
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সে দেশে যাওয়ার অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবেশের শেষ দিন ছিল ৩১ মে। এরপর থেকে কর্মী ভিসায় আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারবেন না।
এই সুযোগে কিছু এজেন্সির যোগসাজশে এই রুটে ভাড়া কয়েক গুণ বেড়ে লাখ টাকার বেশি হয়ে যায়। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে অনেকে ৩১ মে শুক্রবার সকাল থেকে বিমানবন্দরে আসতে থাকেন। যেসব এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি তারাই ডেকে আন তাদের।
সংকট লাঘবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে একটি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে। কিন্তু তাতে সর্বোচ্চ ২৭১ জন যাত্রীর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ মেলে। দিনভর অবস্থানের পর কয়েকশ মানুষ বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করে। শেষমেষ স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে পরদিন বাড়িতে ফিরে যায় তারা।
বিমানের টিকিট না পেয়ে ঠিক কতজন আটকে গেছেন, তার হিসাব নেই সরকারি সংস্থার কাছে। জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার দাবি তিন থেকে চার হাজার কর্মী যেতে পারেননি।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১ জুলাই ২০২২ থেকে ৩১ মে ২০২৪ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ জনকে। বিএমইটি ছাড়পত্র পেয়েছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জন। এর মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়া গেছেন। যেতে পারেনি ১৬ হাজার ৯৭০ জন।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সরকার এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। সিন্ডিকেটে আস্থা নেই সরকারের। সব এজেন্সিগুলো যেন পাঠাতে পারে সেটা চায় সরকার।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, যারা যেতে পারেননি সেই কারণ খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত সচিব নূর মোহাম্মদ মাহবুবকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপরিশের আলোকে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।
বিএ…