খবর২৪ঘন্টা ডেস্ক: টারন্যাশনাল লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিবলে সিএমএসডি ২৫ হাজার টাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার, ট্রলি, ফ্লোমিটার ইত্যাদি ক্রয় করত। কিন্তু ২৩ জুন অনুষ্ঠিত দরকষাকষি, বাজার যাচাই ও কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সভায় একই প্রতিষ্ঠান ভ্যাট, আয়করসহ একই পণ্য প্রতি ইউনিট ১০ হাজার টাকা কমিয়ে ১৫ হাজার টাকায় সরবরাহ করতে সম্মত হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির ২৪ তারিখের সভায় এটি অনুমোদিত হয়। সিএমএসডি পরিচালক চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর চাইলে সাম্প্রতিক সিএমএসডি কর্তৃক হ্রাসকৃত ১৫ হাজার টাকা হারে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিতে পারে। অথবা হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে নির্ধারিত খুচরা মূল্য সুপারিশসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে প্রেরণ করতে পারে।’
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকার অনুমোদিত মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে চারটি- লিন্ডে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেড, স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ইসলাম অক্সিজেন প্রাইভেট লিমিটেড।
মেডিকেল অক্সিজেনের বাজারের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বহুজাতিক কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশ। কোম্পানিটির দৈনিক গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা ১২০ টন। চাহিদার ভিত্তিতে মেডিকেল অক্সিজেনসহ বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো কিংবা কমানোর সুযোগ রয়েছে তাদের।
গত বছর কোম্পানিটি দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকার মেডিকেল গ্যাস বিক্রি করেছে। মেডিকেল গ্যাসের মধ্যে অক্সিজেনের পরিমাণই বেশি।
এসব প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল অক্সিজেন হিসেবে যে সিলিন্ডার ব্যবহার হয়, তা ১৪শ’ লিটার ধারণক্ষমতার। এছাড়া ছয় হাজার লিটার এবং ৯ হাজার ৪০০ লিটারের মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে।
যেসব হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট নেই সেই হাসপাতালে এসব সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৪শ’ লিটারের একটি সিলিন্ডার রিফিল করতে ব্যয় হয় ১১০ টাকা।
কিন্তু ধাতব সিলিন্ডার, প্রেসার গজ, নেজাল ক্যানোলা, ফেসমাস্ক, চ্যানেলসহ ইত্যাদির সিকিউরিটি মানি বা জামানত হিসেবে কোম্পানিগুলো ২৪ হাজার টাকা রাখে। সিলিন্ডার ফেরত দিলে এই জামানতের টাকা ফেরত দেয়া হয়।
কিন্তু হাসপাতালগুলো সাধারণত সিলিন্ডার রিফিল করিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে জামানতের টাকা প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে যায়, আর রিফিল বাবদ দিতে হয় ১১০ টাকা। তাছাড়া একটি সিলিন্ডারের দৈনিক ভাড়া ধরা হয় ২৯ টাকা।
একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গণমাধ্যমকে বলেন, সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীদের হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তবে এসব সিলিন্ডার থেকে রোগীদের প্রতি মিনিটে ৪ থেকে ৬ লিটার পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব।
কোনো রোগীকে মিনিটে ৪ লিটার করে অক্সিজেন দিলে একটি সিলিন্ডার দিয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। এসব ক্ষেত্রে রোগীদের কাছ থেকে প্রতি ঘণ্টা এক হাজার টাকা বিল করলে অক্সিজেনের মূল্য দাঁড়ায় ৬ হাজার টাকা। কিন্তু হাসপাতালভেদে এই বিল নেয়া হয় দ্বিগুণ থেকে চারগুণ পর্যন্ত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) রোগী ছাড়া কোনো রোগীরই টানা এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি অক্সিজেনের দরকার হয় না।
কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের কাছ থেকে এক ঘণ্টার অক্সিজেন বিল নিয়ে থাকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। তারা বলেন, অক্সিজেনের খুচরা মূল্য ঘণ্টায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা করার একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা জটিল হলে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়।
করোনা রোগীদের অক্সিজেনের উৎস ও সরবরাহের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অন্তর্র্বর্তীকালীন নির্দেশিকা প্রকাশ করে ৪ এপ্রিল। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সব মারাত্মক ও জটিল করোনা রোগীকে অক্সিজেন দিতে হবে। ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে এ রকম রোগী থাকেন কমপক্ষে ২০ জন।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে অক্সিজেনের একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণে তিনি একটি কমিটি করে দিয়েছেন।
যারা সরকারি হাসপাতালের অক্সিজেনের ব্যয়ের পরিমাণ নিরীক্ষা করে ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি খাতে অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ করবেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, হয়তো শিগগিরই এ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হবে।
খবর২৪ঘন্টা/নই