বগুড়ার সোনাতলায় বড় ভাইকে পাগল দাবি করে কোমরে রশি বেঁধে ও পায়ে হ্যান্ডক্যাপ ( হাতকড়া) পড়িয়ে মধ্যযুগীয় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ঢাকায় কর্মরত এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে বন্দী জীবনে অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী সামছুল। এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের মারতে তেড়ে আসেন ওই পুলিশ সদস্য। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেন। থানা পুলিশের দাবি এ ঘটনায় কেউ কখনো থানায় অভিযোগ করেনি ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, সোনাতলা পৌর এলাকার আগুনাতাইড় গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেনের দুই ছেলে সামছুল ও আকিজ মিয়া। ছোট থেকেই বড়ভাই সামছুল একটু ভবঘুরে স্বভাবের হওয়ায় লেখাপড়ায় বেশিদূর এগুতে পারেনি। এদিকে তার ছোটভাই এসএসসি পাশ করে পুলিশ কন্সটেবলের চাকরি পায়। অভিযোগ উঠেছে, বড় ভাই ভবঘুরে স্বভাবের হওয়ায় ছোট ভাই আকিজ সুযোগ খোঁজে সম্পত্তি হাতানোর! চাচার সহযোগীতায় বড় ভাইকে পাগল আখ্যা দিয়ে কোমরে রশি বেঁধে ও দুই পায়ে হ্যান্ডক্যাপ লাগিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় চালায় নির্যাতন! নির্যাতনের ভয়ে ছোটভাইকে জমি লিখে দিতেও বাধ্য হন সামছুল। এভাবে কয়েক মাস ধরে ঘরে আটকে রেখে অর্ধাহারে রাখার ফলে সামছুল এখন অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্ত!
নির্যাতিত সামছুল সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন , তাকে পাগল সাজানোর জন্য তার ছোটভাই তাকে বেঁধে রেখে ও পায়ের সাথে হাতকড়া লাগিয়ে রেখেছে । ছুটিতে আসলেই দিনের পর দিন মারপিট করে । তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন , পশুর মতো আচরণ করা হতো । কিছু বললেই নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিত ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর দাবি, বড় ভাইয়ের সুচিকিৎসা না করে কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি তার ছোট ভাই আকিজ দলিল করে নিয়েছে। তবে আকিজ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সবই ষড়যন্ত্র ।
এদিকে লোমহর্ষক এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকের উপর চড়াও হন নির্যাতিতর ছোটভাই ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল আকিজ মিয়া। এ সময় তিনি সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
এদিকে তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার নিজে এসে নির্যাতিত বড় ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্হা করে দেন সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন। এরআগে তিনি সামছুলের পায়ে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় দেখতে পান । তার অভিযোগও শোনেন ।
চিকিৎসকদের মতামতের উপর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নির্যাতিত সামছুলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও নির্যাতনকারী আকিজ মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রেজাউল করিম রেজা সামছুলকে পুলিশের সহযোগিতায় ইউএনও কর্তৃক উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান , সামছুল পাগল কিনা সেটা চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানানোর আগেই কোন কিছু নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় । আর এভাবে নির্যাতন করার বিষয়টি আগে কেউ পুলিশকে অবহিত করেনি । সামছুল উদ্ধার হবার পরও মধ্যরাত পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ দেননি । তবুও পুলিশ তদন্ত করছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এবং চিকিৎসকরা নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করলে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
জেএন