খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: ফেসবুক মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপের নির্মাতারা অবশেষে মতানৈক্যের কারণে ফেসবুক থেকে সরেই গেলেন। বিজ্ঞাপন ও ডাটার মাধ্যমে অনেক বেশি আয় কীভাবে করা যায় এ নিয়ে মতভেদ হওয়ার কারণেই ক্ষুদে-বার্তা আদান প্রদান করার সবচেয়ে জনপ্রিয় এ অ্যাপটির নির্মাতারা ফেসবুক ছেড়ে চলে গেলেন। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের।
ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের নির্মাতাদের বিচ্ছেদের ভেতরের কথা। নানা আলোচনা সমালোচনার পরও ফেসবুক তাদের বিজ্ঞাপনভিত্তিক ব্যবসা মডেল থেকে সরে দাঁড়ায়নি। যদিও গেলো মাসে ফেসবুক নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মার্ক জাকারবার্গকে আমেরিকান ও ইউরোপের আইনপ্রণেতাদের সামনে জবাবদিহি করতে হয়েছিল।
নবংঃ ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপকে অধিগ্রহণের পর থেকেই হোয়াটসঅ্যাপের দুই নির্মাতার সাথে ফেসবুকের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। হোয়াটসঅ্যাপের দুই নির্মাতা জ্যান কউম এবং ব্রায়ান অ্যাকটনের সাথে ফেসবুক সিইও জাকারবার্গ ও ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গের মতবিভেদ চলতেই থাকে।
মূল কারণটি ছিল অর্থনৈতিক। ফেসবুক ২০১৪ সালে ২২০০ কোটি ডলারের বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপকে কিনে নেয়। কিন্তু সে অনুযায়ী অর্থ কামানোর তেমন সুযোগ হোয়াটসঅ্যাপে ছিল না। তা নিয়ে ফেসবুকের হর্তাকর্তারা ক্রমশই অসন্তুষ্ট হচ্ছিলেন।
দ্বিতীয় কারণটি ছিল বিজনেস এথিকস। হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিষ্ঠাতাদ্বয় চাইতেন না, হোয়াটসঅ্যাপে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন চালু হোক। এরই সাথে সাথে ফেসবুকের ডাটা প্রাইভেসি পলিসি নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ সন্তুষ্ট ছিল না। এইসব ইস্যু নিয়ে ফেসবুক চাইতো হোয়াটসঅ্যাপ তাদের সাথে ঐক্যমতে পোঁছাক। কিন্তু সেটি কোনওভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, একবার হোয়াটসঅ্যাপ সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যান কউম জাকারবার্গকে বলেছিলেন, আমার কাছে কোনও প্রজেক্ট চালানোর জন্য জনবল নেই। তখন উত্তরে জাকারবার্গ বলেছিলেন, আপনার যত লোক লাগবে আমার কাছ থেকে নিন।
তবে যখন ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপকে অধিগ্রহণ করে তখন মার্ক জাকারবার্গ শেয়ার বিশেষজ্ঞদের বলেছিলেন যে, তিনি মনে করেন না কোনও ক্ষুদে-বার্তা আদান প্রদানের অ্যাপে বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ আয় করা উচিত। এছাড়াও ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপকে স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত ভাবে চলার কথা বললেও পরবর্তীতে এ কথাটি আর বলবত রাখেনি।
হোয়াটসঅ্যাপের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা ফেসবুকের এই অধিগ্রহণের ফলে বিলিয়নার হলেও নৈতিকভাবে ফেসবুকের বিজনেস মডেলকে সমর্থন করতে পারছিলেন না। দুই পক্ষই হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গেলো বছরের সেপ্টেম্বরে ব্রায়ান অ্যাকটন হোয়াটসঅ্যাপ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এবং চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যান কউম পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপের এই বিবাদ শুধু বড়কর্তাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না, দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছিল বিবাদ। হোয়াটসঅ্যাপের কর্মী সংখ্যা কম ছিল দেখে এর ডেস্ক, বাথরুম এবং দেয়াল সবকিছু নিয়েই ফেসবুক কর্মচারীদের তাচ্ছিল্যের ভাব ছিল।
সেই বিবাদ প্রকাশ্যে রূপ নেয় ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে হোয়াটসঅ্যাপ সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাকটন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকে। এই ঘটনার পর ম্যাসেঞ্জারের এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ডেভিড মার্কাস অ্যাকটনের দিকে একদিন তেড়ে গিয়ে জোর গলায় বলেন, আপনি ছোটলোকের মতো কাজ করেছেন। এই মন্তব্যের কোনও জবাব দেননি অ্যাকটন।
গেলে সেপ্টেম্বর ব্রায়ান অ্যাকটন এবং আগামী আগস্ট মাসে জ্যান কউম হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাদের সাথে ফেসবুকের চুক্তির সম্পর্ক ছিল চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত। কিন্তু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আগে চলে যাওয়ায় ব্রায়ান অ্যাকটন এবং জ্যান কউম দুইজনের সাকুল্যে গচ্চা দিলো ১৩০ কোটি ডলার।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ফেসবুকের এই দ্বন্দ্ব কোনও না কোনও দিন হওয়ার কথাই ছিল। দুপক্ষের বিজনেস এথিকসের ভিন্নতার কারণে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ সহপ্রতিষ্ঠাতাদের এই বিচ্ছেদের মূল্য তাই দাঁড়ালো ১৩০ কোটি ডলার।
সর্বশেষ সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জ্যান কউমের সরে যাওয়ার পর হোয়াটসঅ্যাপে তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন ফেসবুকে দীর্ঘসময়ের জন্য এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ক্রিস ড্যানিয়েলস।
বিশ্বব্যাপী ১৫০ কোটি মাসিক ব্যবহারকারী নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ এখন পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্ষুদে-বার্তা আদান প্রদানের অ্যাপ। এখন দেখার পালা ফেসবুকের বিজ্ঞাপনভিত্তিক বিজনেস মডেলের চাপে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সামনে কীভাবে উপস্থাপিত হয়।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ