নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীতে হিজড়াদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। কেউই যেন রক্ষা পাচ্ছেননা এই হিজড়াদের কবল থেকে। শিশু জন্ম নিলে বা বিয়ের খবর শুনলেই কথিত হিজড়ারা দল বেঁধে গিয়ে আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা না করেই মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। আর চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না পেলে বাড়িঘরের জিনিসপত্র ভাংচুরসহ নানাভাবে হয়রাণি করা হয় সেই বাড়িওয়ালাকে। এভাবেই চাঁদাবাজি করে থাকে রাজশাহী মহানগরীতে কথিত নামধারী চাঁদাবাজরা হিজড়া। কোনভাবেই এদের দৌরাত্ম কমছেনা। থানা পুলিশকেও নাকি এরা ভয় করেনা। প্রতিনিয়তই চাঁদাবাজদের কবলে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। যার কারণে বিয়ে বা শিশুর জন্ম নিলে আতঙ্কে থাকেন নগরবাসী। শুধু বিয়ে বা শিশুর জন্ম নিলেই নয় বাস টার্মিনাল ও পাড়া মহল্লায় গিয়েও তারা চাঁদাবাজি করে। তাদের চাহিদামত চাঁদা না দিলে পড়তে হয় হয়রানির মধ্যে। আর লাল পতাকা বা কোন কাপড়ের টুকরো টানানো বাড়িতে গিয়েও চলে এদের দৌরাত্ম।
প্রতিদিনই এমন অনাকাঙ্খিত ঝামেলার মধ্যে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। তবে আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো যেখানেই কোন বিয়ে বা শিশুর জন্ম নিক এরা খবর পেয়ে যায়। আর সংবাদ পাওয়ার পরই শুরু হয় এদের দৌরাত্ম। এদের মাসোয়ারা পাওয়া সোর্সরাই এদের বিয়ে বাড়ি ও শিশু জন্মের খবর দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর হিজড়াদের তথ্য আদান প্রদান করার জন্য কিছু সোর্স ছাড়া হয়েছে হিজড়াদের পক্ষ থেকে। যে সমস্ত সোর্সগুলো শুধু তাদের শিশুর জন্ম বা বিয়ে বাড়ির খবর দিয়ে থাকে। খবর পাওয়ার পরেই হিজড়ারা সেখানে গিয়ে চাঁদাবাজি করে থাকে। আর এতেই কমিশন পেয়ে যায় হিজড়াদের তথ্য দাতা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে নগরীর এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, যারা হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি করে এদের মধ্যে অধিকাংশই হিজড়া নয়। এরা শুধু আর্থিক সুবিধার জন্য হিজড়া সেজে থাকে। এদের অনেকের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার থাকে।
ফাইল ছবি
তিনি আরো দাবি করেন, তদন্ত করলে এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। প্রকৃত হিজড়া পাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। এজন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যাতে হিজড়া বেশধারীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে, গত কয়েকদিন আগে নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন একটি এলাকায় গিয়ে শিশু জন্ম নেওয়ার খবর শুনে হিজড়ারা সেখানে উপস্থিত হয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। যদি তাদের টাকা দেওয়া না হয় তাহলে তারা বাড়ি থেকে যাবেনা এবং ভাংচুর করবে বলে জানিয়ে দেয়। তার কয়েকদিন আগেও সেই বাড়ি থেকে চাঁদা নিয়ে যায় হিজড়ারা।
বাড়ির মালিক বলেন, হিজড়াদের পুলিশের ভয় দেখালে হিজড়ারা উল্টো তাদের বলে, থানা পুলিশ তাদের (হিজড়াদের) কিছু করতে পারবেনা। পরে দাবি করা টাকা থেকে কিছু কম দিয়ে বিদায় করা হয়।
তার আগে নগরীর রাজপাড়া থানা এলাকার আরেক বাড়িতে গিয়ে হিজড়ারা টাকা নেওয়ার জন্য বাড়িওয়ালাকে নানাভাবে হয়রাণি করা শুরু করে। বাড়ির মালিক অভিযোগ করে জানান, তিনি গরীব মানুষ। তার মেয়ের বাচ্চা হলে হিজড়ারা টাকা নেওয়ার জন্য তার বাড়িতে যায়। তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়েই ৫০০ টাকা বের করে দেন। কিন্তু তারা ৫ হাজার টাকা নাহলে বাড়ি থেকে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে অনেক কষ্ট করে দুই হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করা হয়।
হিজড়াদের জ¦ালায় অতিষ্ঠ হয়ে নগরীর একটি ওয়ার্ডে হিজড়া প্রতিরোধ কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি ঘোষণা দিয়েছে কোন হিজড়াকে তারা ঢুকতে দেবে না। ঢুকলেও বের করে দেওয়া হবে।
শুধু ওই বাড়ি নয় প্রতিনিয়তই হিজড়ারা বিভিন্ন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা দাবি করছে। আর এসবের পেছনে রয়েছে কথিম হিজড়া চাঁদাবাজরা।
অন্যদিকে নগরীর হড়গ্রাম পূর্বপাড়ার বাসিন্দারা জানায়, চাঁদাবাজরা তাদের মহল্লায় এসে প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা আদায় করেছে। তারা কাউকেই ছাড় দিয়ে যায়নি।
রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রহনপুরগামী ট্রেনে উঠেও প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে হিজড়া চাঁদা উঠায়। আর তাদেও দাবি অনুযায়ী টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রাণি করা হয় তাকে।রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রেও থেমে নেই এদেও দৌরাত্ম। প্রতিদিন পার্কে ঢুকে প্রত্যেকে দর্শনার্থীদের কাছ থেকেও এরা চাঁদা আদায় করে। আর কেউ টাকা দিতে না চাইলে লোক সম্মুখেই তাকে অপদস্থ করে নামধারী হিজড়রা।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়ের আলম, হিজড়াদের প্রতিহত করতে সামাজিক সহায়তাও প্রয়োজন। এটা পুলিশের পক্ষে একা করা সম্ভব নয়। তারপর নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমন কোন ঘটনা ঘটলে থানায় খবর দেওয়ার জন্য পরামর্শও দেন তিনি।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে