পাবনা প্রতিনিধি: লাগাতার সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলায় আতঙ্কের গ্রামে পরিণত হয়েছে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বিলচান্দক গ্রাম। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতার সমর্থকদের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে গ্রামে উভয়পক্ষের মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে মারামারি, লুটপাট ও পাল্টা লুটপাট।
একপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা রহমত মণ্ডল আর অপর পক্ষে আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আনসার আকন্দ (লালু আকন্দ)।
লাগাতার সংঘর্ষে সাধারণ গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্কিত লোকজন প্রাণভয়ে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি দু’পক্ষের লোকজনকে নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) ফজল-ই-খোদা বৈঠকে বসেন। মারামারি বন্ধে কড়া নির্দেশনা দেওয়ার পরও আতঙ্ক কাটছে না সাধারণ গ্রামবাসীর। জানমাল রক্ষায় যে যার মতো দলে দলে গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছেন।
তবে বিষয়টি রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব দাবি করে ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফুল কবীর জানান, একটি বিয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লালু আকন্দের সমর্থক এনামুল হক মামলা করলে পুলিশ রহমতের সমর্থক লোকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।
এ ঘটনার জেরে রহমত মণ্ডলের লোকজন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে লালু আকন্দ গ্রুপের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও লোকজনকে মারধর করে। এসব ঘটনায় হামলা-পাল্টা হামলা এবং লুটপাট ও পাল্টা-লুটপাট শুরু হয়। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এসময় উভয়পক্ষের শতাধিক বাড়িতে লুটপাট হয়।
শনিবার বিলচান্দক গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের শিশুসহ শত শত নারী-পুরুষ হাঁড়ি-পাতিল, লেপ-কাঁথাসহ আসবাবপত্র এবং গরু-ছাগল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে চলেছেন।
গ্রামের ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় অধিকাংশ বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে কোনো লোকজন নেই। গ্রামের একমাত্র বাজার বন্ধ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকলেও কোনো শিক্ষার্থী নেই। দু-চারজন থাকলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
বিলচান্দক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলাম বাবুল ভীত ও কম্পিত কণ্ঠে বলেন, “ভাই, কোনো কথা বলতে পারব না। ঘরের বেড়ারও তো কান আছে। শুনলেই আমার বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীর কথা শুনেছি। আমাদের অবস্থা এখন তার চেয়েও খারাপ।”
বিলচান্দক গ্রামের মর্জিনা বেগম বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে মারামারির কারণে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। প্রাণ বাঁচাতে পরিবারসহ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছি। রহমত ও লালুর পক্ষের মারামারিতে আমাদেরও ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে।”
এনিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দিঘুলিয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে দু’পক্ষের লোকজনকে নিয়ে মীমাংসায় বসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সার্কেল) ফজল-ই-খোদা, ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সরকার, ফরিদপুর পৌর মেয়র কামরুজ্জামান মাজেদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফুল কবীর।
উভয়পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে তা মীমাংসা করার জন্য ফরিদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ফরিদপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফজল-ই-খোদা জানান, গ্রামের মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। দু’পক্ষকেই পুনরায় সংঘর্ষে না জড়াতে সতর্ক করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় ফরিদপুর থানায় পৃথক দুটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন