খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ ও শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান ‘একুশে পদক’ পাওয়া দুজনকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
এবারের একুশে পদকপ্রাপ্তদের যারা বাছাই করেছেন তাদের ‘জ্ঞান’ ও ‘ধারনা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ২০১৭ সালে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া এই ফোকলোর গবেষক।
শামসুজ্জামান খান ২০০৯ সালের ২৪ মে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। তিনবার তার পদের মেয়াদ বাড়ানোর পর ২০১৮ সালের ২৩ মে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে থেকে বিদায় নেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নিজের আইডিতে আলাদা দুটি পোস্টে শাসমুজ্জামান খান এবারের স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত দুজনকে নিয়ে এই প্রশ্ন তোলেন।
ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এবার দেয়া হয় একুশে পদক। এদের মধ্যে চারজনকে মরণোত্তর পদক দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন।
একুশে পদক ঘোষণার পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি এই পদক নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে ফেসবুকে পোস্ট দেন শামসুজ্জামান খান। পোস্টে তিনি লিখেন, ‘এবার একুশ পদক বড়ই হতাশাব্যজ্ঞক হয়েছে। যারা এ পুরস্কার কমিটিতে ছিলেন তাদের সাহিত্য সংস্কৃতি সম্মন্ধে কোনও ধারণা নেই। তিন চারটি ছাড়া অন্যগুলো হাস্যকর। কে সাহিত্যিক, কে মুক্তিযোদ্ধা, কে একেবারেই এ পুরস্কার পেতে পারেন না, সে সম্পর্কে বিচারক/বাছাইকারীদের অজ্ঞতা পর্ব্বতপ্রমাণ। এতে সরকারের বদনাম হয়। সরকারকে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।’
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয় দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদক। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবছর নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন।
স্বাধীনতা পুরষ্কারে মনোনীতদের নাম ঘোষণার পর ফেসবুকে আরেকটি পোস্টে বাংলা একাডেমির সাবেক ডিজি লিখেন, ‘এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজউদ্দীন, ইনি কে? চিনি না তো। নিতাই দাসই বা কে! হায়! স্বাধীনতা পুরস্কার!’
যদিও এবার স্বাধীনতা পুরষ্কারের জন্য মনোনীতদের মধ্যে নিতাই দাস নামের কেউ নেই। তবে কালীপদ দাস নামের একজন রয়েছেন। এ বিষয়ে শামসুজ্জামান খানের ভাষ্য, কালীপদ দাস লিখতে গিয়ে তিনি নিতাই দাস লিখেছেন।
এবারের স্বাধীনতা পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন- স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, মরহুম কমান্ডার (অব.) আবদুর রউফ, মরহুম মুহম্মদ আনোয়ার পাশা ও আজিজুর রহমান; চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী ও অধ্যাপক এ কে এম এ মুকতাদির; সাহিত্যে মুক্তিযোদ্ধা এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ এবং সংস্কৃতিতে কালীপদ দাস ও ফেরদৌসী মজুমদার। এ ছাড়া শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমস এবার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
ফেসবুকের পোস্ট তার করা কিনা এবং এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একুশে পদক প্রাপ্তদের কয়েকজনকে আগেও বিতর্ক উঠেছিল। তবে এবারের মতো বিতর্ক আর হয়নি। সরকার যেখানে অনেক ক্ষেত্রে ভালো কাজ করছে, সেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দুটি বেসামরিক পুরষ্কার অখ্যাত-অজ্ঞাত মানুষকে দেয়া হলে সেটি সকলের জন্যই বিব্রতকর।’
সর্বোচ্চ সম্মাননা দুটি দেয়ার আগে ভালো মতো যাচাইবাছাই করা দরকার জানিয়ে বাংলা একাডেমির সাবেক ডিজি বলেন, সবসময় দেখতে হবে যেন যোগ্যদের হাতেই এই পুরষ্কার পৌঁছয়। যেমন বলা যেতে পারে এবার সাহিত্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল কাইউম, সনজীদা খাতুনের মতো স্বনামখ্যাত কেউ নেই। অথচ কালীপদ দাস, রইজউদ্দিন, আজিজুর রহমান- তারা পেয়েছেন। এদেরকে তো আমরাই চিনি না। এদের সাহিত্যকীর্তি কি তাও তো অজ্ঞাত।’
তবে এবার স্বাধীনতা পদকের জন্য বেশ কয়েকজন যোগ্যকে মনোনীত করা হয়েছে বলেও জানান স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শামসুজ্জামান খান।
খবর২৪ঘন্টা/নই
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।