আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করতে জার্মানির একটি বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে সোলাইমানি হত্যার দায় কি জার্মানির অ্যাঞ্জেলা মেরকেল সরকারের ওপরও পড়ে না?
গত ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদ বিমানবন্দরে গাড়ি বহরে ড্রোন হামলা চালিয়ে সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালানোর জন্য জার্মানির রামস্টাইন বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে।
জার্মানির লেফ্ট পার্টি সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডে চ্যান্সেলর মেরকেল এবং জার্মান মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তদন্তের আবেদন জানিয়েছিল। জার্মান প্রসিকিউটর গত মার্চে তাদের ওই আবেদন নাকচ করে দেয়। তখন বিষয়টি গোপন রাখা হলেও চলতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত নথিপত্র প্রকাশ পায়।
প্রসিকিউটরের তদন্ত না করার সিদ্ধান্ত ২০১৯ সালে মুনস্টার আদালতের দেয়া এক রায়ের বিরুদ্ধে প্রথম চ্যালেঞ্জ। ২০১৯ সালের মার্চে ম্যুনস্টারের একটি আদালতের রায়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে রামস্টেইন বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করছে কিনা বা তারা জার্মানির মাটিতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে কিনা তা নিরূপণে জার্মান সরকারকে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে হবে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত নিজেদের ভূখণ্ড থেকেই তাদের সামরিক ড্রোনগুলো পরিচালনা করে। কিন্তু স্যাটেলাইট সিগনাল বলছে, জানুয়ারিতে বাগদাদে চালানো ওই হামলাসহ মধ্যপ্রাচ্যে আরো কয়েকটি ড্রোন হামলায় তারা রামস্টাইন বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করেছে।
সাবেক ড্রোন ক্যামেরা অপারেটর ব্র্যানডন ব্রায়ান্ট এবং আরো কয়েকজন আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেছিলেন, রামস্টাইন বিমান ঘাঁটিটি যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন সিস্টেমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং নিশ্চিতভাবেই জার্মানির স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া তারা ড্রোন হামলায় ওই ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারতো না।
ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক নেতা এবং দেশটির অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিশোধ নিতে ইরান প্রতিবেশী ইরাকে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। তারপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে দেখা দিয়েছিল চরম উত্তেজনা।
ওই সময় জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের এ হত্যার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত কিনা এমনকি সেটা জানতেও জার্মানিকে তারা কোনো তথ্য দেয়নি।
বার্লিনভিত্তিক ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর পরিচালক আন্ড্রেয়াস শুলা বলেন, যদিও জার্মান সরকারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ বাতিল করা হয়েছে। তারপরও এ ঘটনা সরকারকে রামস্টেইনের ওপর আরো ভালোভাবে নজরদারি করতে বাধ্য করবে।
তিনি বলেন, অন্তত জার্মানিতে বসে যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালালে সেটা অবশ্যই আগে থেকে জানানো উচিত। যুক্তরাষ্ট্র যা করছে যদি অন্যান্য দেশও তা করতে শুরু করে; তবে তো আমরা সেই ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’ পদ্ধতিতে ফিরে যাবো। যেখানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে পাশে ঠেলে কে আগে গুলি করতে পারে সেই নীতি চলে।
জানুয়ারিতে সোলাইমানিকে হত্যার পর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে লেফ্ট পার্টির আটজন পার্লামেন্ট সদস্য মেরকেল এবং তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিষয়টি অবজ্ঞা করার অভিযোগ আনেন।
অভিযোগে বলা হয়, জার্মানির মাটিতে আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখতে এবং দেশের সংবিধান অনুসরণ করতে বর্তমান সরকার পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছে। কিন্তু ফেডারেল প্রসিকিউটর তাদের ওই অভিযোগ এখনই আমলে নিয়ে তদন্তত শুরু করতে রাজি নয়। ডি ডব্লিউ।
খবর২৪ঘন্টা/নই
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।