নজরুল ইসলাম তোফা: নাট্য জগতের গণ্ডিকে ভেঙে যিনি আধুনিক ধারায় নিযে আসেন অভিনয় কলার বিশাল এক দিক যেমন, চিত্রকলা, নৃত্যকলা, সঙ্গীত, আখ্যান, উপাখ্যানের মতোই নানা সমন্বয় ও সংমিশ্রণ তিনি হলেন অমর নাট্যকার সেলিম আল দীন। উপমহাদেশের শেকড় সন্ধানী বরেণ্য নাট্যচার্য এমন ব্যক্তি ড. সেলিম আল দীনেকে স্মরণ করেই গত বুধবার ২৮ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ফেনী-সোনাগাজী রাস্তার এক পাশে ২৮দিন ব্যাপি শিল্প-সাংস্কৃতি মেলা ২০১৮ শুরু হয়েছে। বলা যায় যে, ইতিমধ্যে সোনাগাজীতে এমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন অনেকটাই জমে উঠেছে।
ড. সেলিম আল দীনকে নিয়ে এমন শিল্প, সাংস্কৃতির মেলায় সকল শ্রেণীর জনগণের উপছে পড়া ভীড়ে প্রতিনিয়তই যেন অসংখ্য ক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগমে দোকানদার অনেক খুশি। একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী নাট্যকার এবং গবেষক, তাঁকে নিয়েই সাজানো এই মেলায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকম পণ্য। আসলেই যে তিন নাট্য জগতের পথিকৃত। তাঁর সৌজন্যে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।বাংলা নাটকের নব্যধারার প্রবর্তক কিংবা বিশ্বনাট্য মঞ্চের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বললে তা কখনোই ভুল হবার নয়। সারা বাংলার গর্ব, বাঙালির অনেক গুনি জনের ভালোবাসায় পুষ্পিত এই নাট্য জনকেই বলা হয় বাংলা নাটকের গৌড়জন। অতএব তাঁকে নিয়ে আরও বৃহৎ আয়োজন হওয়া দরকার এই বাংলায়।সোনাগাজীতে ড.সেলিম আল দীনকে নিয়ে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাঁকে নিয়েই আলোচনা হয়, তিনিই তো আজকের বাংলা নাটক থিয়েটারে বহু যুগের অবহিত সংস্কৃতিটুকুকে তুলে এনে বিনোদনের সংমিশ্রণেই অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করেছেন। তাকে অশিকার করার উপায় নেই। এই বাংলার মাটিতেই, এমন বাংলার জলহাওয়ায়, আমাদের প্রাণের ভাষাতেই জন্ম নেওয়া তাঁর নাটক গুলো, আসলেই বাংলা নাটকের সকল উপাদানকে ছুঁয়ে যাওয়া যুগোপযোগী আধুনিকতার এক নতুন মাত্রা। সুতরাং বলাই হয়, রবীন্দ্রোত্তরকালের বাংলা নাটকের তিনিই মহান এবং প্রধান পুরুষ।
তাঁর সৃজনশীলতা কিংবা সৃষ্টিশীল অনেক নাটকের কিরণচ্ছটা ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। আর আমাদের বাংলাদেশের গর্ব, সংস্কৃতির প্রান পুরুষ, প্রয়াত নাট্যকার- – সেলিম আল দীনের স্মৃতি বিজড়িত সোনাগাজীতেই ১ম বার আয়োজন হয়েছে তাঁকে নিয়েই মেলা। আয়োজক কর্তৃপক্ষের অভিমতের আলোকে বলতে হয় আগামীতেও এমন ভাবে তাঁকে স্বরণ করেই উৎযাপন হবে। এই মিলন মেলায় ড. সেলিম আল দীনের অসংখ্য বই রয়েছে।বিশ্বসাহিত্যের ধ্রুপদী তিনি বাংলার সংস্কৃতিকে এক মহাকাব্যিক ব্যাপ্তিদানে সার্থক হয়ে আছেন জনতার মাঝে। তাই তো এই মেলায় অজস্র জনতা তাঁর বই সংগ্রহ করছেন। তিনি তো বাংলা নাটকের শিকড় সন্ধানী নাট্যকার। তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, নাট্য বিষয়ক বহু গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা পূর্বক বাঙলা নাটকের সহস্র বৎসরের ইতিহাস এবং তাঁর একটি সুস্পষ্ট আঙ্গিক নির্মাণেও সমর্থ হয়েছিলেন, রচনা করেছেন মধ্যযুগের বাঙলা নাটক। বাঙলা ভাষার একমাত্র নাট্য বিষয়ক কোষ গ্রন্থ, বাঙলা নাট্য কোষ সংগ্রহ, সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদন করেই বাঙলা নাট্যের কোষগ্রন্থের অভাব পূরণে সক্ষম হয়েছিলেন। নাট্য বিষয়ক গবেষণা পত্রিকা থিয়েটার স্টাডিজ-এর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই গুনীজনের নিরন্তর সৃষ্টিশীলতায় মুখর হয়ে সোনাগাজীর মানুষ সহ দূর দূরান্তের মানুষেরা উপস্থিত হচ্ছেন। বলা যায় এমন মেলার আয়োজকরা অবশ্যই সংস্কৃতিমনা।
মেলায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শিল্পীদের আগমনের কথা শুনে দুপুরের পর থেকেই স্কুল, কলেজ এবং পাড়া মহল্লা থেকে উৎসুক দর্শক শ্রোতারা মেলায় আসতে শুরু করে। বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষেরও আগমন ঘটে মেলার মাঠে। এখানে চলে বিরতিহীন ভাবে অনেক শিল্পী অভিনেতাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেমন, কৌতুক,গান, নৃত্য ও মঞ্চ নাটক সহ সেলিম আল দিনকে আলোচনা। এমন পরিবেশে হাজারো দর্শক শ্রোতার মন মাতাতে দেশ বরেন্য শিল্পিরা নাকি মজাও পাচ্ছেন। সুতরাং বলাই যায় সোনাগাজীতে উৎসবের আমেজ। আছে নাগর দোলা, চলছে সার্কাস, মোটর সাইকেল সহ কার সার্কাস। প্রথমবার এমন এই মেলা আয়োজনে আয়োজিত কমিটিরা অনেক আশাবাদি আগামীতে তাঁরা আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজন করবেন।
লেখক: নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ