খবর ২৪ঘণ্টা ডেস্ক: সিলেটে চিকিৎসকসহ তিন যুবক পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এদের দুজন রাস্তা থেকে নিখোঁজ হন এবং চিকিৎসককে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় নগরীর টিলাগড় থেকে কলেজে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন এমসি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাজ্জাদ আহমদ (২২)। এর আগের সন্ধ্যায় টিলাগড় এলাকা থেকেই নিখোঁজ হন ইমাদ উদ্দিন (২৪) নামের এক যুবক।
এই দুজন নিখোঁজের ঘটনায় তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে নগরীর শাহপরান থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। গতকাল সোমবার পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি।
এ ব্যাপরে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমবার রাতে বলেন, ‘এই দুই যুবককে উদ্ধারে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে তাদের অপহরণ করা হতে পারে এমন কোনো আলামত আমরা পাইনি। হতে পারে তারা নিজেরাই কোনো কারণে আত্মগোপন করেছে। আমরা তাদের খোঁজ বের করতে সব ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছি।’
তবে এই দুই যুবকের পরিবারের সদস্যরাই অভিযোগ পুলিশের দিকেই। পরিবার দুটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুলিশের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে তারা এদের সন্ধান জানে। পুলিশই হয়তো তাদের নিয়ে গেছে।
এই দুই যুবক নিখোঁজ হওয়ার দিন (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পরিচয়ে জকিগঞ্জ থেকে ডা. মাহফুজ আলম (৩০) নামে এক চিকিৎসককে তুলে নিয়ে যায় একদল যুবক। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁরও কোনো সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ ডা. মাহফুজ কসকনকপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে।
মাহফুজের মামা মোসলেহ উদ্দিন বলেন, একটি সোনালী রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে ছয়-সাতজন লোক মাহফুজকে তুলে নিয়ে যায়। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। পরদিন বিকেলে জানা যায় তাঁকে পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী আটক করেছে। তাঁকে প্রথমে মহানগর পুলিশের এক উপকমিশনারের কার্যালয়ে রাখা হয়। পরে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশের কেউ তাদের কাছে তা স্বীকার করেনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তাও এই তিন যুবককে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী ধরে নিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন।
তবে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বলেছেন, ‘তাদের পুলিশের কোনো বাহিনী আটক করেছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি।’
টিলাগড় থেকে নিখোঁজ ইমাদ উদ্দিন কমলগঞ্জ উপজেলার শংকরপুর গ্রামের মো. রমিজ মিয়ার ছেলে। আর এমসি কলেজের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেনের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের পশ্চিম নোয়াগাঁও গ্রামে। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী। স্বজনরা জানান, ইমাদ উদ্দিন গত বুধবার মৌলভীবাজারের ভানুগাছ থেকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে সিলেটে অবস্থানরত এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলার ১০ মিনিট পর থেকে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
সিলেটের এমসি কলেজে যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার নিখোঁজ হন সাজ্জাদ হোসেন। টিলাগড় শাপলাবাগ এলাকার একটি ছাত্রাবাসে থাকেন তিনি। সাজ্জাদ এমসি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
সাজ্জাদের সন্ধান দাবিতে গত রোববার কলেজের সামনে মানববন্ধন করেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও হবিগঞ্জ জেলা ছাত্র সমন্বয় পরিষদ।
সাজ্জাদ আলীর বড় ভাই সুজিদ সুজাহিদ আলী বলেন, এখনো সাজ্জাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনো সদুত্তর দেওয়া হচ্ছে না। তার ভাই কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা নাশকতার কোনো কাজে জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন সুজাহিদ।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই