নিজস্ব প্রতিবেদক :
দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর মায়ের করে ফিরে গেল আমেনা খাতুন যুথি (১২)। যুথির বয়স তখন ৬ বছর। কোনো কারণে বাবা আব্দুস সাত্তার ও মা সালমা খাতুনের বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটে! যুথির কপালে জোটে সৎ মা! ছোট্ট যুথি সৎ মায়ের জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলো না! উপায় না পেয়ে চাচার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। সেখানে গৃহপরিচারিকার কাজ করা শুরু করে কচিমনা যুথি। কিন্তু সেখানেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। বাড়ির কর্তা মাঝে-মধ্যেই মারধর করত যুথিকে!
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি। যুথির বয়স তখন ৮ বছর। সেদিনও গৃহকর্তার হাতে মারধরের
শিকার হয় ছোট্ট গৃহপরিচারিকা যুথি। সৎ মায়ের কারণে ঠাঁই হয়নি বাড়িতে! ঢাকায় গিয়েও গৃহকর্তার অত্যাচার। তাই উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় যুথি। সকলের অজান্তে গৃহকর্তার বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা চলে যান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। উঠে পড়েন রাতের রাজশাহীর ট্রেনে। ট্রেনে উঠেই ফুঁপিয়ে কান্না করছিল যুথি। পরদিন ভোরে যুথিকে নিয়ে ট্রেন চলে আসে রাজশাহী। যুথির এমন পরিণতির বিষয়টি নজরে পড়ে জনৈক এক যাত্রীর। ট্রেন থেকে নামিয়ে যুথিকে নিয়ে তিনি সোজা চলে যান রাজশাহীর (শাহ মাখদুম
থানার) ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে। ওইদিন থেকে (৮ জানুয়ারি ২০১৯) যুথির আশ্রয় রাজশাহীর মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র শেল্টার হোমে।
বুধবার বিকালে আমেনা খাতুন যুথিকে (১২) তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়ার পর এসিডি’র শেল্টার হোম ম্যানেজার পুষ্প রাণী বিশ্বাস যুথির শেল্টার হোমে আসার ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন। পুষ্প রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘যুথির গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাঙ্গল কোর্টে। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি শেল্টার হোমে আসার পর থেকেই সে আর বাড়িতে ফিরে যেতে চাচ্ছিলো না। কিন্তু গত ৩-৪ মাস থেকে সে তার মাকে ফিরে পেতে আর্জি জানায়। তার আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে যুথির পরিবারের খোঁজ করতে রাজশাহী ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারকে অনুরোধ জানায় এসিডি।
অবশেষে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারের কর্মকর্তারা যুথির পরিবারের খুঁজে পায়। ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে আজ (গতকাল বুধবার) তার পরিবারকে আসতে বলেন যুথিকে নিতে। সেই অনুযায়ী যুথির মা সালমা খাতুন, তার সেই সৎ মা ও যুথির ভাই যুথিকে নিতে আসেন। ৪ বছর ৭ মাস পর বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে যুথিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়।’
আর/এস