নজরুল ইসলাম জুলু : ২০১৬ সালে সাবেক আইজিপি ও ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম সহচর শহিদুল হক বিভাগীয় এএসপি পদোন্নতির ক্ষেত্রে অসাধু কোটা পদ্ধতি চালু করেছিলেন। সে কোটা পদ্ধতি চালুর ফলে সিনিয়র পুলিশ পরিদর্শকদের বাদ দিয়ে কৌশলে জুনিয়র পুলিশ পরিদর্শকদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন সাবেক আইজিপি শহিদুল হক।
পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, সাবেক এই আইজিপি তার ব্যক্তিগত স্বার্থে ও কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এবং তাদেরকে বিশেষ সুবিধা প্রদানে অনৈতিকভাবে কিছু নিয়ম চালু করেছিলেন।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে কোটা পদ্ধতি চালু হওয়ার পূর্বে ২০১২ ও ২০১৪ সালে পুলিশ পরিদর্শকদের পদোন্নতির (PL) যে তালিকা তৈরি করা হয় সে তালিকা ভুক্ত দের বঞ্চিত করে ২০১৬ সালের কোটা পদ্ধতি তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। শহিদুল হকের চালু করা কোটা পদ্ধতিতে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) দের জন্য ৭১.৯১%, পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) দের জন্য ১৪.২২%, পুলিশ পরিদর্শক (সশস্ত্র) দের জন্য ১৩.৮৭% কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি বিশেষ সূত্রে বলেন, “তিনি ( সাবেক আইজিপি শহিদুল হক) নিজে বেনিফিট হওয়ার জন্য কোটা পদ্ধতিকে নিজের মতো যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতেন। তার অসাধু কোটা পদ্ধতি চালুর ফলে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে। পদ খালি না থাকলেও সাবেক আইজিপি আর্মস সাব-ইন্সপেক্টর(RI)দের জন্য ১২% কোটা সংরক্ষণ করে ছিলেন। পদ না থাকার পরও ট্রাফিক ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির জন্য ১৭% কোটা নিশ্চিত করা হয়েছিল। সারা বাংলাদেশে যে বিশাল পরিমাণ নিরস্ত্র পুলিশ ইন্সপেক্টর আছে তাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল ৭১%।” সূত্রটি আরও বলেন, “জুলাই-আগষ্টে কন্সটেবল থেকে ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার সদস্যরা রাস্তায় জীবন দেন, আহত হোন। সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষ এ কষ্ট গুলো দেখেছে। বড় বড় পুলিশ কর্মকর্তাদের আদেশ পালন করতে দিয়ে আক্রোশের মুখে পড়তে হয়েছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের। এই নিয়ে ৫ই আগষ্টের পর পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের দাবিতে বিদ্রোহ হয়। তখন আমাদেরকে আস্বস্ত করা হয়েছিল ভবিষ্যতে অনিয়মের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখে সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু, গত ২৬শে সেপ্টেম্বর পলিসি গ্রুপ মিটিংয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে প্রমোশনের পুরোনো নিয়ম প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে প্রমোশন করার বিষয়টি উত্থাপন করা হলে মিটিংয়ে উপস্থিত শহিদুল হকের অনুচররা শহিদুল হকের অনৈতিক নিয়মগুলো কে অর্থাৎ শহিদুল হককে জায়েজ করার জন্য পুরোনো নিয়ম গুলোকেই সামনে তুলে ধরেন এবং সেই পার্সেন্টেজ অনুসারেই প্রমোশনের সুপারিশ করেন।” সূত্রটি দাবি করেন, শহিদুল হকের অসাধু কোটা পদ্ধতি হীন উদ্দেশ্যে তারই প্রেতাত্মারা অপ্রোয়জন পলিসি গ্রুপ মিটিং এ উপস্থাপন করে অনৈতিক কোটা পদ্ধতিকে স্বীকৃত দেওয়ার অপচেষ্টা করে। তিনি আরও জানান, ” ৫ই আগষ্টের পর সমগ্র দেশে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রোমোশন হয়েছে এবং এদের অনেকেই বিগত দুইমাসেই ৪টা প্রমোশন পেয়েছেন। কিন্তু, কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার সদস্যদের একজনও এখনো প্রমোশন পাননি। শহিদুল হকের অনুচররা তার কোটা সংরক্ষণ পদ্ধতির সাথে সম্মতি প্রকাশ করে আগের নিয়মানুসারে প্রমোশন দিয়ে সামনে এগুতে চাচ্ছেন। আর্মস ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টররা প্রমোশন যোগ্য না থাকলেও তাদের জন্য তারা পদ সংরক্ষণ করে রাখবেন কিন্তু তবুও তারা নিরস্ত্র ইন্সপেক্টরদের প্রমোশন দিতে চাননা। এভাবে তারা আমাদেরকে পদ বঞ্চিত করছেন।”
সূত্রটি আরও জানান, গত ৬মাসের মধ্যে নিরস্ত্র পুলিশ ইন্সপেক্টররা প্রমোশন পাননি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় অন্তত ২০/৩০টা প্রমোশন অব্যাহত ছিল। কিন্তু, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এখন পর্যন্ত একজন ইন্সপেক্টর কে এএসপি পদে প্রমোশন দেওয়া হয় নি। নীতি নির্ধারকদের এমন হটকারি সিদ্ধান্তে বিশাল পরিমাণ নিরস্ত্র পুলিশ ইন্সপেক্টররা আগেও বঞ্চিত হয়েছেন এখনো হচ্ছেন। ” পদ বঞ্চিত নিরস্ত্র পরিদর্শকদের সূত্র হতে জানা যায়, একজন ট্রাফিক পরিদর্শক যদি আজকে প্রমোশনের জন্য ফিট হোন। তবে আগামী মাসেই তিনি প্রমোশন পেয়ে যান। প্রমোশনের জন্য তাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হয় না। অর্থাৎ, তাদের জন্য প্রমোশনের পথটি অনেকবেশি প্রশস্ত রাখা হয়েছে। অথচ, একজন প্রমোশনযোগ্য নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক প্রমোশনের যোগ্য হয়ে ১০/১৫ বছর অপেক্ষা করেও পদ সৃষ্টি না হওয়ায় প্রমোশন পান না। তারা অভিযোগ করেন ২০২৪ সালে এএসপি পদে প্রমোশন যোগ্য কোনো সশস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক না থাকলেও তাদের জন্য ৩৫টি পদ সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। অথচ, বিপুল সংখ্যক নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক যারা আগামী ২/৩মাসের মধ্যে অবসরে যাবেন তাদেরকে প্রমোশন থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শকেরা দীর্ঘদিন প্রমোশনের অপেক্ষা করে প্রমোশন না পেয়েই অবসরে চলে চলে যান। দীর্ঘদিন থেকে নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শকরা প্রমোশন নিয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বঞ্চিত পুলিশ পরিদর্শকেরা আশা করেছিলেন
বৈষম্য রোধে নতুন সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু এই সরকারও এখন পর্যন্ত এই বৈষম্য রোধে কোনো ভূমিকা রাখছেন না বরং বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মা হয়ে কাজ করছেন। বঞ্চিত পুলিশ পরিদর্শকরা এই প্রমোশন বৈষম্যের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, পুলিশ বাহিনীর
বিশাল পরিমাণ নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শকদের মূল্যায়ন করে প্রমোশন বৈষম্য দূর করলে পুলিশের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। পুলিশের মধ্যে শৃঙ্খলা ও কার্যত যুগোপযোগী সংস্কার করার জন্য পুলিশ বাহিনীর সংস্কার নিয়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা যদি ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মা মুক্ত না করা হয় তাহলে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হবে না। এতে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ বাড়বে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
বিএ..