খবর২৪ঘণ্টা.বিনোদন,ডেস্ক: ঘোমটা মাথায় দিয়ে বসে রয়েছেন সানি লিওন। স্বামী ঘরে ঢুকতেই সেই ঘোমটা খসে গেল। উঠে দাঁড়ালেন তিনি। খুলে ফেললেন নেকলেস, কোমরবিছে, একে একে সব গয়না। ততক্ষণে স্বামীও নিজের জামা খুলে ফেলেছেন। খুলেছেন সানির চোলির একটি ফিতেও। এরপর কয়েক সেকেন্ড দেখা গেলেও, বেশিদূর এগোননি এই মডেলরা। তাতেই ঘাড়ে কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে ভারত সরকারের। উঠেছে ‘জাত গেল জাত গেল’ রব।
ফলে সানি লিওনকেই উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের।
সানি লিওন এখানে প্রতীক মাত্র। তার অভিনীত একটি কন্ডোমের বি়জ্ঞাপন থেকে উপরের দৃশ্যটির বিবরণ। যে বিজ্ঞাপন আট থেকে আশি— সবার দেখা হয়ে গেছে গত কয়েক মাসে। বিভিন্ন টিভি ও ইন্টারনেটের নানা চ্যানেলের মাধ্যমে।
নানা দিক থেকে অভিযোগ পেয়ে সরকার ঠিক করেছে, শুধু সানি অভিনীত বিজ্ঞাপনই নয়, কন্ডোমের সব বিজ্ঞাপনকেই দিনের আলো থেকে সরিয়ে রাতের গভীর অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার। টিভিতে এই সব বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে। দেখা যাবে শুধু গভীর রাতে।
একেই বোধ হয় বলে ভাবের ঘরে চুরি। এমন ভাবখানা যেন টিভিতে না দেখলে আর কোথাও গর্ভনিরোধক কোনও বিজ্ঞাপনের মুখোমুখি হবে না শিশুরা। এই ডিজিটাল যুগে যেখানে ইন্টারনেটে গিয়ে ‘পি’ টাইপ করলেই ‘পর্নোগ্রাফি’ শব্দ চলে আসে সেখানে এমন নিষেধাজ্ঞা হাস্যকর।
যে দেশে এক বছরে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ গর্ভপাতের ঘটনার কথা জানা যায় (ল্যান্সেট গ্লোবাল হেল্থ রিপোর্ট), যে দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে মাত্র ২৫.৭ শতাংশ এইচআইভি প্রতিরোধ সম্বন্ধে জানে (ইউএনএইডস), যে দেশে ৬২ হাজার মানুষ এইডস সম্পর্কিত অসুখে মারা যায়, সে দেশের সরকারের পক্ষে কন্ডোমের মতো গর্ভনিরোধকের বিজ্ঞাপন দেখানোর সময় নিয়ে নিষেধাজ্ঞাই সাজে। মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সে দেশের পরিবার পরিকল্পনায় পুরুষদের যোগদানের অন্যতম হাতিয়ার নিয়ে কথা না বলাই তো ‘পবিত্র কাজ’।
শিশুদের জন্য গর্ভনিরোধক বিজ্ঞাপন অশ্লীল ও অনুপযুক্ত। কিন্তু এই বিজ্ঞাপন ছাড়া যেন শিশুমনে প্রভাব ফেলার মতো কোনও ‘আইটেম নম্বর’ দেখা যায় না টিভিতে সম্প্রচারিত সিনেমায়। কুটিলতায় ভরা টিভি সিরিয়াল দেখে যেন শিশুমনে কোনও প্রভাব পড়তে পারে না। এছাড়া ডিওডোর্যান্ট থেকে আরও নানা বিজ্ঞাপনে যেন প্রচ্ছন্ন যৌনতা থাকে না। যৌনতার নানা চিহ্ন যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই চারিদিকে!
২০১৭ সালে দাঁড়িয়ে স্রেফ নৈতিকতার অজুহাতে একটি সামাজিক ও জনস্বাস্থ্যের সমস্যাকে মোকাবিলা করার একটি অস্ত্রকে কালো কাপড় মুড়িয়ে রেখে দেওয়াটা অর্থহীন।
ব্রিটেনেও রাত ন’টার আগে টিভি চ্যানেলে কন্ডোমের মতো বিজ্ঞাপন দেখানো যেত না। সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে টিনএজারের মধ্যে গর্ভধারণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু বলা হয়েছে, ছোটদের মধ্যে জনপ্রিয় কোনও টিভি অনুষ্ঠানের মধ্যে এই বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে না। সেখানকার অ্যাডভার্টাইসিং স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি বলছে, আমরা কোনও বিজ্ঞাপন নিয়ে অভিযোগ পেলে বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু নিয়ে তদন্ত করতে পারি। কিন্তু যে পণ্যের বিজ্ঞাপন, তা নিয়ে আমাদের কোনও মতামত থাকতে পারে না।
সমস্যাটি সেখানেই। ভারত সরকার একটি বিজ্ঞাপনের কন্টেন্ট নিয়ে আপত্তির কারণে সেই বিজ্ঞাপনটি আইনত নিষিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু তা বলে ‘ভয় পেয়ে আর ভয় দেখিয়ে’দিনের বেলায় গর্ভনিরোধক কোনও বিজ্ঞাপনই দেখানো যাবে না বলে যে ফতোয়া দিয়ে দিল, তা নিছক মুর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়।সূত্র: এবেলা
খবর২৪ঘণ্টা.কম/জন