1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিদেশফেরত ৩০২ বাংলাদেশি! - খবর ২৪ ঘণ্টা
শনিবার, ১১ জানয়ারী ২০২৫, ০:০০ অপরাহ্ন

ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিদেশফেরত ৩০২ বাংলাদেশি!

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১২ সেপটেম্বর, ২০২০

খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: বিদেশফেরত ৩০২ বাংলাদেশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কুয়েত, কাতার, ভিয়েতনাম ও বাহরাইনের কারাগারে বন্দী ছিলেন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশেষ বিবেচনায় সে দেশের সরকার তাদের সাজা মওকুফ করে মুক্তি দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশফেরত এসব বাংলাদেশি অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে যা শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

বিদেশফেরত ৩০২ জনকে তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ীর কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়। সেখানে থাকাকালীন তারা বিভিন্ন সময় গ্রুপভিত্তিক সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের জিডি (সাধারণ ডায়েরি) মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আদালত আবেদন গ্রহণ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তারা কারাগারে আটক আছেন।

আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা বলছেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সে দেশের সরকার তাদের কারাদণ্ড দেয়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তাদের সাজা মওকুফ করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু দেশে আসার পর পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। দীর্ঘদিন হয়ে গেল আদালত তাদের জামিন দিচ্ছে না। আমরা তাদের জামিন চাই।

তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তাদের এখন ছেড়ে দিলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে।

গত ৪ জুলাই ২১৯ জন বিদেশফেরত বাংলাদেশিকে কারাগারে পাঠান আদালত। তাদের মধ্যে ১৪১ জন কুয়েত, ৩৯ জন কাতার এবং ৩৯ জন বাহরাইনফেরত। গত ১ সেপ্টেম্বর বিদেশফেরত আরও ৮৩ বাংলাদেশিকে কারাগারে পাঠান আদালত। তাদের মধ্যে ৮১ জন ভিয়েতনাম এবং দুজন কাতারফেরত। কারাগারে পাঠানোদের বিরুদ্ধে করা জিডি দুটি বর্তমানে তদন্তাধীন। তুরাগ থানা পুলিশ জিডির তদন্ত করছে।

সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর ২১৯ জন বিদেশফেরত বাংলাদেশির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। এদিন তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ সফিউল্লাহ প্রতিবেদন দাখিল না করে আদালতের কাছে ৩০ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন।

তদন্ত কর্মকর্তার সময় আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘২১৯ জন বিদেশফেরত আসামিকে গত ৪ জুলাই আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সোপর্দিত ২১৯ জনের মধ্যে কুয়েত হতে ১৪১ জন, কাতার হতে ৩৯ জন এবং বাহরাইন হতে ৩৯ জন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে উল্লিখিত দেশসমূহে কারাগারে ছিলেন বলে পত্র পাওয়া যায়। করোনাভাইরাস মহামারির বিষয়টি বিবেচনা করে উপরোক্ত দেশসমূহ বিশেষ বিবেচনায় তাদের সাজা মওকুফ করে মুক্তি প্রদান করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।’

‘উল্লিখিত আসামিরা বিদেশে থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। যা শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এমতাবস্থায় উল্লিখিত ডায়েরির বিষয়টি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিধায় সর্বাধিক গুরুত্বসহকারে জোর তদন্ত অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সকল সোপর্দিত আসামির নাম-ঠিকানা, পিসি, পিআর, পূর্বেকার কর্মকাণ্ড, পূর্ব ইতিহাস ইত্যাদি যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাসমূহে পৃথক পৃথকভাবে অনুসন্ধান স্লিপ প্রেরণ করা হয়েছে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত সকল আসামির নাম-ঠিকানা যাচাই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায় নাই। এছাড়া আদালতের নির্দেশে ১৩ জন হাজতি আসামিকে কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারের জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের নিকট হতে তদন্তে সহায়ক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ডায়েরির বিষয়টি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিধায় তা সর্বাধিক গুরুত্বসহকারে অন্যান্য সংস্থাও অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনায় সার্বাক্ষণিক মনিটরিং করছেন। তাই ডায়েরির অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত সমাপ্ত করা সম্ভবপর হয়নি বিধায় সুষ্ঠু তদন্তের সার্থে আরও ৩০ কার্যদিবস বর্ধিত সময় একান্ত প্রয়োজন।’

রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের লক্ষ্যে গোপন সলাপরামর্শ

৩০২ জনের পৃথক ডায়েরির অভিযোগ থেকে জানা যায়, ‘প্রবাসী এসব বাংলাদেশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও ভিয়েতনামের কারাগারে বন্দী ছিলেন। করোনাভাইরাস মহামারির বিষয়টি বিবেচনা করে উপরোক্ত দেশসমূহ বিশেষ বিবেচনায় তাদের সাজা মওকুফ করে মুক্তি প্রদান করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।

উল্লিখিত আসামিরা বিদেশে থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। যা আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া তাদের সঠিক নাম, ঠিকানা পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় তাদের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা পূর্ণ হওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, পারিবারিক সহিংসতা, জঙ্গি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

‘যেহেতু উক্ত ব্যক্তিগণ বিদেশে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আটক ছিলেন এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাদের দ্বারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেহেতু জনগণের জানমালের নিরাপত্তার রক্ষার্থে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।’ ‘উল্লিখিত ব্যক্তিরা বাংলাদেশে ফেরত আসার পর তাদের তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ীর কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়। কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে গ্রুপভিত্তিকভাবে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মসূচি পালন করাসহ বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার লক্ষ্যে গোপনে সলাপরামর্শ করত বলে গোপন সূত্রে তথ্য পাওয়া যায়।’

আটক ব্যক্তিদের স্বজনরা যা বলছেন

কাতারফেরত এবং কারাগারে থাকা আমিনুল ইসলামের বাবা আমির হোসেন বলেন, পাঁচ বছর আগে আমার ছেলে কাতারে যায়। যাওয়ার তিন মাস পর গাড়িতে মাদক পাওয়ায় তাকে সে দেশের সরকার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। করোনার সময় তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দেশে আসার পর কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। সেখান থেকে গত ৪ জুলাই কারাগারে পাঠানো হয়। আজও তাকে জামিন দেননি আদালত। সরকারের কাছে দাবি, তাকে যেন জামিন দেয়া হয়।

কারাগারে থাকা দিল মোহাম্মদের ছোট ভাই আব্বাস বলেন, সংসারের অবস্থা ভালো না হওয়ায় ছোট ভাই দিল মোহাম্মদকে কুয়েতে পাঠাই। সেখানে যাওয়ার পর সে দেশের সরকার তাকে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়। করোনায় সাজা মওকুফ করে তাকে দেশে পাঠানো হয়। দেশে আসার পর তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়। আদালত তাকে জামিন দিচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই তো সে বিদেশে গিয়েছিল। আমরা দ্রুত তার মুক্তি চাই।

কবির হোসেনের শ্যালক আল-আমিন বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমার দুলাভাই কুয়েত যান। সে দেশের সরকার তাকে সাজা দেন। করোনায় সাজা মওকুফ হয়ে দেশে আসলে তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়। এখন আদালত তাকে জামিন দিচ্ছে না।

উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যা বলছেন

জামিন না দেয়া প্রসঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়েন্ত শাহ বলেন, দেশের জন্য তারা বিদেশে গিয়েছিলেন। সে দেশের সরকার তাদের সাজা মওকুফ করে বাংলাদেশে পাঠায়। বাংলাদেশে আসার পর তাদের ফের কারাগারে পাঠানো হয়। সাধারণ ডায়েরির (জিডি) মামলায় দীর্ঘদিন তারা কারাগারে আটক আছেন। আদালতের কাছে জামিন চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু আদালত জামিন দিচ্ছেন না। আমরা আসামিদের জামিন চাচ্ছি।

আইনজীবী ইমরুল হোসেন বলেন, আদালতের কাছে আসামিদের জামিন চাচ্ছি। কিন্তু আদালত জামিন মঞ্জুর করছেন না। জামিন পাওয়া তো তাদের মানবিক অধিকার।

ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) হেমায়েত উদ্দিন খান হিরোন বলেন, ‘বিদেশে থাকাকালে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সে দেশের সরকার তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তাদের সাজা মওকুফ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে আসার পর তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। কিন্তু কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় তারা রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। আচার-আচরণ সন্দেহমূলক হওয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে করা জিডি তদন্তাধীন। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর জানা যাবে তাদের স্বভাব-চরিত্র আসলে কেমন।’

‘প্রতিবেদন না আসায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাদের জামিনের বিরোধিতা করছি। এমনও হতে পারে, তারা জামিনে গিয়ে দেশে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারেন’— বলেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।

এ বিষয়ে তুরাগ থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ সফিউল্লাহ বলেন, বিদেশফেরত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে করা জিডি তদন্তাধীন। আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই চলছে। ইতোমধ্যে তাদের নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য পত্র পাঠানো হয়েছে। অনেক থানা থেকে এখনও প্রতিবেদন আসেনি। আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় তদন্তে সময় লাগছে।

খবর২৪ঘন্টা/নই

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST