শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার এমজিএসপি প্রকল্পের ১৮টি চেকের মাধ্যমে একদিনে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে সিংহভাগ অর্থ গায়েব করার অভিযোগ ওঠেছে। জানা যায়, বগুড়া পৌর সভার একদিন আগে ১৮৭৬ সালে শেরপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় জমিদারী আমলে শেরপুর পৌরসভা মিউনিসিপ্যাল নামে পরিচিত ছিল। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মজিবর রহমান মজনু পৌর চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এই পৌর সভাকে
প্রথম শ্রেনীতে উন্নীত করলেও পরবর্তীতে অন্য মেয়র আসলেও পৌর নাগরিকদের বিন্দু মাত্র সুযোগ সুবিধা কোন সুযোগ পায়নি। প্রায় অর্ধ লাখের ওপরে বসবাসরত শেরপুর পৌরবাসীর দূর্ভোগের সীমা নাই। সামান্য বৃষ্টিতে শহরের রাস্তায় কাঁদা-ময়লার জলকেলিতে ভাসতে থাকে মলমুত্র। শহরের নয়টি ওয়ার্ডের প্রতিটি সড়ক খানাখন্দকে ভরা। ভাঙ্গাচুড়া রাস্তায় চলতে সুস্থ মানুষ যেন অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এমন রাস্তবতায় আগামী ১৬জানুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৌর পরিষদের সাধারণ নির্বাচন। পৌরবাসীদের মতে, প্রায় দেড়‘শ বছরের পুরাতন শেরপুর পৌরসভার সদ্য বিদায়ী পরিষদ শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে নাগরিক সেবায়। অনিয়ম হয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের ভাউচারে। শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার জানালেন, তার মেয়াদে কোন অনিয়ম হয়নি। গোপন সুত্রে জানা যায়, সরকারের (এমজিএসপি) মিউনিসিপ্যাল গর্ভামেন্স সার্ভিসিং এন্ড
প্রজেক্টের আওতায় চলতি বছর ১২অক্টোবর সোনালী ব্যাংক লিঃ শেরপুর শাখার এসটিডি হিসাব নং-০৬২৭০০৩০০০০৮০ থেকে একদিনে মোট আঠারটি চেকের মাধ্যমে ৫৪ লাখ ৬২হাজার ১৭৭ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শেরপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুস সাত্তার আরও বলেন, এমজিএসপি প্রকল্পের টাকা সঠিক ভাবে ব্যয় হয়েছে।
পৌর সচিব ইমরোজ মুজিব বলেন, এমজিএসপি প্রকল্পের টাকা ব্যয়ের ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না। তবে একদিনে সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের ঘটনা সঠিক। একাধিক পৌর কাউন্সিলর জানান, নয়টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ২৬জন লেবার ড্রেন ও রাস্তা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করলেও প্রতিদিন অতিরিক্ত বিল ভাউচার হয়েছে আরও ২৮জনের। ফলে জনপ্রতি ৩০০টাকা হারে সাড়ে আট হাজার টাকা দৈনিক আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে।
সোনালী ব্যাংক শেরপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো.আনোয়ারুল কবির জানান, গত ১২অক্টোবর সোমবার শেরপুর পৌরসভার এসটিডি হিসাব নং ০৭২৬০০৩০০০০৮০ থেকে প্রায় সাড়ে ৫৪ লাখ টাকা ১৮টি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে।
শেরপুর পৌরসভায় হিসাব রক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ফাইলে মেয়র এবং সচিবের স্বাক্ষরের পর যে সকল নোট আসে ওই সকল নোটের ব্যাপারে আমার আপত্তি করার কিছুই নাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক কাউন্সিলর বৃন্দ আরো জানান, পৌর সড়কের রাস্তায় রাতের বেলায় ব্যবহৃত ইলেকট্রিক লাইটে তার-হোল্ডার ও বাল্ভ ক্রয় এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবয়েল এর
লোহার হেড ক্রয় ও পরিবহন খাতের জ¦ালানী ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ শুধুমাত্র সুষ্ঠ তদন্তের পর জানা যাবে।
অপরদিকে শেরপুর পৌরসভার ষ্টোরকিপারের পদটি দীর্ঘদিন শুন্য থাকায় সেখানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অফিস স্টাফ রেজাউলকে। সে নিজেও বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত। এদিকে পৌরসভার মেয়াদ উত্তীর্ন মেয়র-কাউন্সিলরদের গত ৩মাসের সম্মানী ভাতা বকেয়া সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাঁকি গড়ে প্রায় তিন বছর। এজন্য পরিষদের দায়দেনা প্রায় ২২কোটি টাকার উপরে। বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার পরিমান আরও ২কোটি টাকা। এছাড়া ৪-৫থেকে কোটি টাকার দনার দায় নিয়ে
বিদায় নিচ্ছেন শেরপুর পৌরসভার বর্তমান পরিষদ। পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মেয়াদ শেষের আগ মূহুর্তে এডিপি‘র তহবিলের তিনটি প্যাকেজে ৬৭ লাখ টাকার বিশেষ প্রকল্পের ঠিকাদার চুড়ান্ত করেও কাজের কার্যাদেশ দিতে পারেনি পরিষদের হাজারো অনিয়মের কারণে। অপরদিকে ধুনট মোড মার্কেট বরাদ্দ এবং বহুল আলোচিত প্রায় ৩০কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিকাল বাজার পঞ্চম তলার কিচেন মার্কেটের ঘরবরাদ্দে অনিয়মের বিচার এখন মহামান্য হাইকোর্টে রয়েছে।
জেএন