শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধি: বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক থাকলেও বগুড়ার শেরপুরে রনক স্পিনিং মিলের শ্রমিকরা করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ছুটি চাওয়ার অপরাধে গত সোমবার গভীর রাতে কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে শ্রমিকদের দফায় দফায় মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলেও শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে চাপ প্রয়োগ ও গভীর রাতে ভারাটে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে চাকুরীচ্যুত করার হুমকী দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর-সীমাবাড়ী সড়কের শোলাকুড়ি এলাকায় ২০১২ সালে প্রায় ৫০ বিঘা জমির উপরে ১০০জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৬শতাধিক শ্রমিক নিয়ে রনক স্পিনিং মিল দীর্ঘদিন ধরে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে। সম্প্রতি পুরো বিশে^র সাথে বাংলাদেশও করোনা ভাইরাস সংক্রমনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে। আর এ কারণেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারিভাবে ঘোষণা না হলেও বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অনৈতিক উৎপাদনমুখী সকল শিল্প-কারখানা। শ্রমিকরাসহ সাধারণ মানুষ এখন হোম কোয়ারেন্টাইন ও লক ডাউনে রয়েছে।
তবে রনক স্পিনিং মিলের বেলায় ভিন্ন প্রেক্ষাপট। এই মিলে নেই কোন করোনা ভাইরাস সংক্রমনের হাত থেকে সুরক্ষার হাইজিনিক ব্যবস্থা, মিলের শ্রমিকদের নেই কোন আলাদা পারসোনাল প্রোট্রেশন ইউনিফর্ম(পিপিই), মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা। আর এ কারণে শ্রমিকরা ছুটি দাবী করে আন্দোলনে অংশ নেয়। কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী উপেক্ষা করে ওই মিলের কর্মরত শ্রমিকদের কাজে যোগদানের চাপ প্রয়োগে বাধ্য করছে মিল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। এমনকি শ্রমিকদের দাবী না মেনে কাজে যোগদানে অবাধ্য হওয়ায় ৩০ মার্চ গভীর রাত অবদি শ্রমিকদের দফায় দফায় মারপিট করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে শঙ্কিত ওই রনকের শ্রমিকদের মধ্যে আন্দোলনরত রায়হান, আয়েশা খাতুন, নাসরীন পারভীন, হ্যাপি খাতুন, ফরিদুল ইসলাম বলেন, মিলের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের হাত থেকে সুরক্ষার হাইজিনিক ব্যবস্থা, নেই কোন আলাদা পারসোনাল প্রোট্রেশক ইউনিফর্ম(পিপিই), মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা। তারা (শ্রমিকরা) ছুটির দাবী করি, কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কোন কথা না শুনে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়। তাতে রাজী না হয়ে ছুটির দাবীতে গভীর রাত ৪টা পর্যন্ত মিলের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করি। এদিকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ৩০ মার্চ সোমবার গভীররাতে ভারাটে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ৩ দফা মারপিট করানো হয়।
এতে ওই মিলের শ্রমিক মিষ্টি খাতুন, ইমন, বরাত আলী, আনোয়ার, শরিফুল ইসলাম, সুমাইয়া, রূপালী, শিউলি, রেহেনা, সুরভী প্রমুখসহ একাধিকরা আহত হয়।
এদিকে বেতন-ভাতা সহ সাধারণ ছুটির দাবীতে শ্রমিকরা এ আন্দোলনে অংশ করে এবং চাকুরীচ্যুত হওয়ার আশংকায় ভূগছেন বলে তারা দাবী করেন। এদিকে শ্রমিকদের আন্দোলন চলাকালীন সময়ে অপ্রীতিকর ঘটনারোধে শেরপুর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ওসমান গনি, স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং শ্রমিকদের সাময়িকভাবে শান্ত করে পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে রনক স্পিনিং মিলের ফ্যাক্টরী জেনারেল ম্যানেজার(জিএম) মঞ্জুর মোর্শেদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে, তিনি কোন মন্তব্য না করে গ্রæপ জিএমের সাথে কথা বলতে অনুরোধ জানান।
এ নিয়ে রনক স্পিনিং মিলের জেনারেল ম্যানেজার(কর্পোরেট) মো. আবুল কাশেম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ওই মিলে স্বাস্থ্য সুরক্ষারোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেই মিল পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় কতিপয় সুবিধাভোগীদের গ্রæপিংয়ের কারণেই এহেন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু শ্রমিকদের কাজে যোগদানে মারপিটের ঘটনা অস্বীকার করে, কোন চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছেনা, এমরকি আন্দোলনরত শ্রমিকদের চাকুরী হারানোর ভয়ও নেই বলে আশ^স্ত করেন ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর বলেন, শ্রমিক আন্দোলনে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না হয় সেজন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, মিল বন্ধের ব্যাপারে পুরোপুরি নির্দেশনা আমার কাছে আসেনি। তবে কোন শ্রমিক নিরাপত্তাহীনতায় কাজ করতে না চাইলে, তাকে চাপ প্রয়োগ ও চাকুরীচ্যুত করা যাবেনা।
খবর২৪ঘন্টা/নই