শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধি: প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসুচী (পিইডিপি-৪) এর আওতায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত এর কাজে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের সাথে যোগসাজশে কাগজে কলমে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শেরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, শেরপুর উপজেলার ১৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মাইনর (ক্ষুদ্র) মেরামতের জন্য ৬৪টি বিদ্যালয়ের বিপরীতে ২ লাখ টাকা করে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং ১৪টি বিদ্যালয়ের বিপরীতে দেড় লাখ টাকা করে ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের এসব কাজ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি (এসএমসি) এর মাধ্যমে করার কথা। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সাথে যোগসাজশ করে কাগজে কলমে প্রাক্কলন ও কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের চন্ডিজান পল্লীমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি ১ লাখ ১৪ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ভবনটি ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। অথচ এই বিদ্যালয়ের ভবন মেরামতের জন্য দুই মাস পুর্বে ২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে মেরামতের প্রয়োজন না থাকলে বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থ সমপর্ণ করার নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের টুনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আরেফা খাতুন জানান, মেরামতের টাকা দিয়ে ৬টি চেয়ার বানানো হয়েছে। একটি শহীদ মিনার করেছি। কিছু কাজ এখনো বাকি আছে।
কেল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, কিছুদিন পুর্বে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের বাইরের অংশে রং করা হয়েছে। এছাড়া আর কি কাজ করা হয়েছে বলতে পারবো না প্রধান শিক্ষক বলতে পারবে।
গাড়ীদহ ইউনিয়নের বাংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল গফুর জানান, স্কুলের মেরামতের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে শুনেছি কিন্তু কাজের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। প্রধান শিক্ষক বলতে পারবে কি কাজ করেছে।
সরেজমিনে শেরপুর উপজেলার শেরপুর সরকারি প্রাথমিক,খামারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাশিয়াবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখা গেছে এসব বিদ্যালয়ে মেরামতের ২ লাখ টাকা দিয়ে দৃশ্যমান কোন কাজই করা হয়নি। অধিকাংশ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যরা বরাদ্দের ব্যাপারে জানেই না।
উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন রাখী জানান, বন্যার কারণে ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যালয়ের মেরামত কাজ করা যায়নি। কিছুদিনের মধ্যেই কাজ করা হবে।
উপজেলার খানপুর কয়েরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম রেজা জানান, প্রধান শিক্ষক শুধু আমাদের নিকট থেকে কাগজে সই নেন। কি কাজ করেন তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম পুটু জানান, মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকার মধ্যে ২৬ হাজার টাকা ভ্যাট কাটা হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশল অফিসে প্রাক্কলন তৈরীর জন্য ৫ হাজার টাকা খরচ দিতে হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে প্রাক্কলন মোতাবেক স্কুলের জলছাদ মেরামত এবং শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতের জন্য দেড়লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে এবং কয়েকটি গ্রীল লাগানো হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।
এসব বিষয়ে শেরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিনা পারভীন জানান, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরাদ্দপ্রাপ্ত সকল টাকাই বিধি মোতাবেক ব্যয় করা হয়েছে। তবে উপজেলার কালিয়াকৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামতের জন্য দুই খাতে বরাদ্দ আসায় একটি ফেরত দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাইনর মেরামতে কোন অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।
খবর২৪ঘন্টা/নই