শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন করে শনাক্ত হচ্ছেন করোনা রোগী। পাশাপাশি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় করোনায় এক নারীসহ দুইজন মারা গেছেন। এনিয়ে এ উপজেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ছয়জনে। অথচ জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পড়াসহ সচেতনতা যেন কমছে।
জানা যায়, শেরপুর উপজেলায় করোনা সংক্রমণ হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় সচেতন মানুষের মাঝে চরম উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরী হয়েছে। মরণব্যাধি এই ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধির পেছনে স্থানীয় স্বাস্থ্যবিভাগের দায়িত্বহীনতা এবং নিস্ক্রিয়তাকে দায়ি করছেন তারা। তাদের অভিযোগ, মহামারী করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়সারা ভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহে অনীহা, আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদান না করা, তাদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন না করা এবং আক্রান্ত হওয়ার উৎস সম্পর্কে তথ্য গোপন করে লকডাউন ঘোষণা না করা উল্লেøখযোগ্য।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদের বলেন, এই ভাইরাসটি নিয়ে এই উপজেলায় উদ্বেগ ও শঙ্কার কারণ নেই। কারণ করোনা পরীক্ষার জন্য গত শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৮৬২টি নমুনা পাঠানো হয়। এর মধ্যে ২শ ২৯ জনের রির্পোট পজিটিভ এসেছে। তবে এটি স্বাভাবিক। এছাড়া আক্রান্তদের অনেকের শরীরেই তেমন কোন উপসর্গ নেই। তাই করোনা পজিটিভ হলেই হাসপাতালে নিতে হবে এমন নয়। কেবল যাদের শ^াসকষ্ট, তীব্র জ¦র, গলাব্যাথা রয়েছে তাদেরই চিকিৎসার প্রয়োজন। অসুস্থ বেশি হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আর যাদের তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না বা কোন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না তাদের বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১২ মে এই উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। প্রায় আড়াইশ’র কাছে পৌঁছেছে। আক্রান্তদের পরিবার থেকে শুরু হয়ে তাদের সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের পর এখন বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার থেকে করোনার সংক্রমণ হতে শুরু করেছে। শহরের স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডস্থ অগ্রণী ব্যাংকে মোট ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এরমধ্যে তিনজন কর্মকর্তা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তারা বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন। এছাড়া ওই শাখা ব্যবস্থাপকসহ আরও ছয়জন কর্মকর্তা ও দুইজন আনসার সদস্যের শরীরে করোনার ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলেও শাখাটি লকডাউন ঘোষণা না করায় এসব উপসর্গ নিয়েই কাজ করছেন তারা। করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়া হলেও এখনও তারা রির্পোট হাতে পাননি। পরীক্ষার রির্পোট পজিটিভ না আসা পর্যন্ত ছুটি পাওয়ারও কোন সুযোগ নেই। তাই ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান থাকায় তাদের সংস্পর্শে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরী হয়েছে। এমনকি ধারণা করা হচ্ছে-এই অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকেই পাশের সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি ওই শাখার আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এরপরও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের ঘুম ভাঙছে না। বরং তথ্য গোপন করছেন তারা। যেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট জবাবদিহী করতে না হয় তাদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত চব্বিশ ঘন্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শেরপুর উপজেলার দুইজন মারা গেছেন। এরমধ্যে একজন নারী রয়েছেন। তার নাম গীতা রানী। আর মারা যাওয়া পুরুষ ব্যক্তির নাম আফতাব হোসেন। এছাড়া গত ১জুলাই পুলিশ কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ, ১৩জুলাই দলিল লেখক আমজাদ হোসেন, ২০জুলাই মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল ইসলাম, ২২ জুলাই পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মারা যান বলে সূত্রটি জানায়।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করছেন তারা। প্রতিনিয়তই গণসচেতনতা তৈরী করতে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিভাগের গরিমসি থাকলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
খবর২৪ঘন্টা/নই