পাবনা প্রতিনিধি: শেকড় সন্ধানে বাংলাদেশে তার অভিযাত্রার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর পাবনাসহ সারাদেশে চলছে খোঁজ। বাঙালী বংশোদ্ভুত ডেনিস এই নাগরিকের আবেগ ছুঁয়েছে সবাইকে। মিন্টোর স্বজনের খোঁজে মাঠে নেমেছে প্রশাসনও। তবু মিলছে না খোঁজ, তাতে কি, এই কদিনে যেন মিন্টোর স্বজন হয়ে উঠেছে পুরো পাবনাবাসী। হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পাওয়ার মতই, তারা বরণ করে নিলেন মিন্টোকে, বাঙালী আনুষ্ঠানিকতায়।
৪১ বছর পর বাবা-মা ও স্বজনদের খোঁেেজ পাবনায় আসা ড্যানিশ দম্পতি এখনো তার স্বজনদের সন্ধান পায়নি। মিন্টোর এই বেদনাময় সময়টাকে কিছুটা আনন্দময় করতে শুক্রবার পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে, পাবনার সংস্কৃতিকর্মীদের উদ্যোগে “শেকড় সন্ধানী মিন্টোর জন্য ভালবাসা” শিরোনামে আয়োজন করা হয় বরণ অনুষ্ঠান। মিন্টো ও তার ডেনিশ স্ত্রী এনিটিকে সাজানো হয় বাঙালী পোশাকে। নববধুকে বরণের মত করেই মিষ্টি মুখ করিয়ে তাদের বরণ করে নেয়া হয়।
আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির রিপোটার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী বাবলা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি আওয়াল কবির জয়, পাবনা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, পাবনা ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের যাজক ইছাহাক সরকার, পাবনা সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামসুন্নাহার বর্ণা, পাবনা মিউজিক্যাল ব্যন্ডস এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম লিটন, পাবনা ড্রামা সার্কেলের সহ সাধারন সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই নাগরিক মিন্টো কারস্টেন সোনিককে বাংলার চিরায়ত পোষাক পাঞ্জাবী গামছা এবং তার স্ত্রী এনিটি হোমিহেবকে শাড়ি পড়িয়ে দেওয়া হয়। তরুণ শিল্পীদের গানে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো আয়োজন। এ সময় পেশায় চিত্রশিল্পী মিন্টো দম্পতির প্রতিকৃতি নিজ হাতে এঁকে উপহার দেন পাবনার উদীয়মান চিত্রশিল্পী ইকবাল হোসেন। ছবি আঁকেন মিন্টোও। পরে, মিন্টোকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উপহার দেন আয়োজকরা।
প্রতিক্রিয়ায় মিন্টো কারস্টেন সোনিক বলেন, আমি যখন ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে আসি তখন অনেকেই বলেছেন, যে বাংলাদেশীরা খুব খারাপ, ভয়ানক সন্ত্রাসী। কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর আমার সেই চিন্তা ভাবনা পাল্টে গেল। এদেশের লোকজন খুবই ভাল, আমি প্রতি বছর পাবনা আসবো এবং এখানে বাড়ি তৈরী করবো। আপনারা আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছেন। আমি আমার স্বজনদের না পেলেও আমি মনে করি আপনারাই আমার আত্মীয় স্বজন।
এদিকে, মিন্টোকে ১৯৭৭ সালে কুড়িয়ে পাওয়া চৌধুরী কামরুল ইসলামের খোঁজ পেয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করে পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, গণমাধ্যমে খবর পেয়ে বৃহঃস্পতিবার চৌধুরী কামরুল ইসলাম আমাকে ফোন করে জানান, তিনিই মিন্টোকে নগরবাড়ী ঘাট থেকে ঢাকার ঠাঠারিবাজারের আশ্রমে রেখে আসেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। আগামী সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরে মিন্টোর সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, মিন্টোর স্বজন দাবী করে বেশকিছু পরিবার আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। প্রাথমিক কথাবার্তার পর ডিএনএ টেস্ট করাতে রাজী হয়েছেন নগরবাড়ী এলাকার এক বৃদ্ধ।
প্রসঙ্গত: বর্তমানে ডেনিস নাগরিক মিন্টো কারস্টেন সোনিক ১৯৭৭ সালে ছয় বছর বয়সে পাবনার নগড়বাড়ী ঘাটে হারিয়ে যান। সেখান থেকে চৌধুরী কামরুল হোসেন নামের কোন এক ব্যক্তি মিন্টোকে পৌছে দেন ঢাকার ঠাটারিবাজারের এক আশ্রমে। ১৯৭৮ সালে ওলে ও বেনফি নামের ডেনিশ দম্পতি দত্তক নিয়ে ডেনমার্ক নিয়ে যান মিন্টোকে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে সস্ত্রীক পাবনায় এসেছেন তিনি।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।