খবর২৪ঘন্টা ডেস্ক: সৌন্দর্য বাড়ানো ছাড়াও চুলের কাজ অনেক। রোদের তাপ ও বিভিন্ন রোগজীবাণুর আক্রমণ ও দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মাথার ত্বক রক্ষা করে চুল। প্রখর সূর্যকিরণ থেকে মাথার ত্বককে বাঁচায়। তবে মাথার সৌন্দর্য বাড়ানোই চুলের প্রধান কাজ।
.
চুলের পুষ্টি আসে ত্বকের পুষ্টি থেকেই। আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই, তা থেকেই। তাই চুল ভালো রাখতে সারা বছরই খাবারে প্রোটিন রাখুন—মাছ, মাংস, ডিম, ফলের রস, মধু ইত্যাদি। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন এ, বি এবং ডি খেতে হবে প্রতিদিন। এই সময়টাতে গাজর বা টমেটোর রসের সঙ্গে আধা চামচ জিলেটিন মিশিয়ে খান। মৌসুমি ফল ও সবজিও রাখুন প্রতিদিনের খাবারদাবারে।
শীতে চুলের সমস্যা ও সমাধান
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় চুল হয়ে পড়ে রুক্ষ। এ সময় শুকনো খুশকি বেশি দেখা যায়। ঠাণ্ডার কারণে অনেকেই নিয়মিত শ্যাম্পু করতে চান না। অথচ অপরিচ্ছন্নতার কারণেই চুলপড়া ও চুলের অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। শুষ্ক হয়ে পড়ে চুল। চুলের শুষ্কতা দূর করতে প্রয়োজন কন্ডিশনিং। তেল হলো চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো কন্ডিশনার। শ্যাম্পুর ঘণ্টাখানেক আগে মাথায় তেল লাগিয়ে রাখুন। চুলের গোড়ায় চাপ না পড়ে এমনভাবে আলতো মালিশ করুন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। তেল ব্যবহার করলে আলাদাভাবে কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
তেল লাগিয়ে শ্যাম্পু করার পর সিরাম করতে পারেন। এতে চুলের মসৃণ ভাব ঠিক থাকবে। চুলও থাকবে কোমল। ব্লো-ড্রাই যতটা কম করা যায় তত ভালো। দুই মাস অন্তর অবশ্যই চুল ট্রিম করাবেন। চুলের ডগা ফেটে গেলে চুল দেখতে যেমন খারাপ দেখায়, তেমনি চুলের বৃদ্ধি কমে যায়। শীতকালে চুল ভালো রাখতে ট্রিটমেন্ট করতে পারেন মাসে একবার। স্ট্রেইটনিং, কালার, আয়রন মাঝেমধ্যে তো করতে হয়। কারণ, উৎসব আর দাওয়াতের মৌসুম এ শীতকাল। এ ক্ষেত্রে স্পা-ট্রিটমেন্ট করালে চুলের কিউটিকল (বাইরের স্তর) মজবুত থাকবে।
অতিরিক্ত শুষ্কতার কারণে এ সময়ে অনেকেরই চুলের আগা ফাটে। এটা রোধ করতে ৩ চা-চামচ ভিনেগারের সঙ্গে ১ চা-চামচ গ্লিসারিন, ১টি ডিম, ২ চা-চামচ তেল (আপনার ব্যবহৃত) মিলিয়ে মাথায় লাগান। এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত এক দিন করুন। চুলের ডগা ফাটা রোধ করতে এটা ভালো কাজ করে।
টক দই, লেবুর রস, একটি ডিম মিশিয়ে মিশ্রণটি চুলে লাগান দেড় থেকে ২ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। এ পদ্ধতিতে চুল ফাটা বন্ধ হবে।
চুলের যত্ন
চুলের ধরন অনুযায়ী তারতম্য ঘটে চুলের যত্নের। চুলের সুস্থতা ও মসৃণতা ধরে রাখতে দরকার নিয়মিত চুলের ক্লিনজিং, টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং। তাই চুলের যত্ন নেওয়ার আগে জেনে নিতে হবে আপনার চুলের ধরন কেমন। চুলের সাধারণত তিনটি ধরন থাকে—শুষ্ক, স্বাভাবিক ও তৈলাক্ত।
কীভাবে বুঝবেন
শুষ্ক: যদি চুল রুক্ষ, ডগা চেরা–ফাটা হয় তবে আপনার চুল শুষ্ক।
স্বাভাবিক: স্বাভাবিক চুলের ক্ষেত্রে মাথার তেলের পরিমাণ ঠিক থাকে।
তৈলাক্ত: শ্যাম্পু করার অল্প সময়ের মধ্যেই চুল তেলতেলে আর নেতিয়ে থাকলে বুঝবেন আপনার চুল তৈলাক্ত। শীতের সময়ে অবশ্য চুলে শুষ্কতাই দেখা দেয় বেশি ক্ষেত্রে।
তৈলাক্ত চুলের যত্ন
এ ধরনের চুলে মাথার তালু বেশি তৈলাক্ত থাকে। তাই প্রয়োজন বিশেষ পরিচর্যা। তৈলাক্ত চুলে শ্যাম্পু প্রায় প্রতিদিনই করতে হয়। এ রকম চুলের জন্য বাড়িতে একটি প্যাক বানিয়ে চুল পরিষ্কার করতে পারেন। শুকনো রিটা, শিকাকায়ি, আমলকী, সারা রাত ভিজিয়ে পরদিন ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। তরল মিশ্রণটি শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
সপ্তাহে দুদিন বাড়িতে তৈরি হেয়ার প্যাক লাগান। ২ চা-চামচ নিমপাতা গুঁড়া, ২ চা-চামচ মেথি গুঁড়া, ২ চা-চামচ আমলা, ২ চা-চামচ টক দই, ১টি ডিমের সাদা অংশ, আধা কাপ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে ঘণ্টাখানেক রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। ফলাফল নিজেই বুঝতে পারবেন।
স্বাভাবিক চুলের যত্ন
নিয়মিত স্বাভাবিক পরিচর্যার চুলের মসৃণ ভাব বজায় থাকে। বাড়িতে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন সপ্তাহে ২ দিন। মাসে একবার বিউটি স্যালনে গিয়ে পেশাদার হেয়ার ট্রিটমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখুন। ন্যাচারাল কন্ডিশনিংয়ের জন্য চুলে দিন তেল। দিনে কয়েকবার মোটা দাঁড়ার চিরুণী দিয়ে চুল আঁচড়াবেন, তাহলে চুলে যেমন জট হবে না তেমনি মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালনও ভালো থাকবে।
স্বাভাবিক চুলে বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু যেকোনো কিছুই ভালো রাখতে পরিচর্যা জরুরি।
শুষ্ক চুলের যত্ন
যাদের চুল শুষ্ক, রুক্ষ ও লালচে, তারা জবাফুল বাটা, ২ চা-চামচ মধু, ২ চা-চামচ আমলকীর রস, টক দই, ডিমের কুসুম, মেথি গুঁড়া ও ২ চা-চামচ ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন ঘণ্টাখানেক। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুলের উজ্জ্বল ও মসৃণ ভাব ফিরিয়ে আনতে আধা মগ পানিতে লেবুর রস ও চায়ের লিকার মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে চুলের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা ফিরে আসবে।
শুষ্ক চুলের জন্য কন্ডিশনার হিসেবে একটি পাকা কলার সঙ্গে এক চা-চামচ মধু, আধা চা-চামচ দুধের সর ও এক চা-চামচ আমন্ড অয়েল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন।
খুশকি
খুশকি সাধারণত ২ রকমের—শুষ্ক ও তৈলাক্ত। শীতকালে খুশকি বেশি হয়ে থাকে শুষ্কতার কারণে। চুলপড়া এবং খুশকি প্রায় ৮০ ভাগ মানুষেরই সমস্যা। চুলকে খুশকির সমস্যা থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা।
নিজের চিরুণী, ব্রাশ, তোয়ালে, বালিশের কভার যথাসাধ্য পরিষ্কার ও আলাদা রাখুন। মেডিকেটেড শ্যাম্পু, মাইকোনাজোন যুক্ত লোশন, ক্ষেত্র বিশেষে স্টেরয়েড লোশন ব্যবহারে সম্পূর্ণ সেরে যায়। তবে খুশকি নিরাময়ের জন্য ভেষজ উপাদানের ঘরোয়া পদ্ধতিই ভালো।
শীতকালে খুশকি থেকে মুক্তি পেতে
মেথি বাটা, পেঁয়াজের রস, নিমপাতা, লেবুর রস, টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ৩০/৪০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। অন্যের চিরুণী ও তোয়ালেতে খুশকি হলে বা না হলেও ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই ভালো।
ভিনেগারের সঙ্গে পানি মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগলেও খুশকি দূর হয়।
টক দই, মেহেদি পাতা বাটা, মেথি বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক হিসেবে পুরো চুলে ৩০/৪৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। ২/৩ বার ব্যবহারেই খুশকি সম্পূর্ণভাবে চলে যাবে। চুল হয়ে উঠবে অনেক সুন্দর। সপ্তাহে ২ বার এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
২৫০ মিলিলিটার তিলের তেল, ১০০ গ্রাম মেথি গুঁড়া করে মিশিয়ে ১৫/২০ দিন রেখে দিন। তারপর ওই তেল ছেঁকে দু-এক মাস ব্যবহার করুন। খুশকি সম্পূর্ণভাবে চলে যাবে এবং চুল পড়ার প্রবণতা থাকলে তাও বন্ধ হয়ে যাবে।
খুশকি দূর করার জন্য লেবুর রস, জবাফুল ও মেথি পেস্ট করে লাগালেও খুশকি কমবে।
পেঁয়াজের রস ব্যবহারে খুশকি দূর হয়ে যায়।
খুশকি দূর করা খুবই জরুরি কেননা, মাথায় খুশকি থাকলে চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। দুর্গন্ধ হয় এবং চুল পড়াও শুরু করে।
তথ্য ও ছবি: এসপি
খবর২৪ঘন্টা/নই