খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: কারাগারে আটক খ্যাতনামা আলোকচিত্রী ও অ্যাকটিভিস্ট শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে এবার খোলাচিঠি লিখেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিসসহ ১৩ জন বরেণ্য ব্যক্তি। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে লেখা ওই চিঠিতে শহিদুলের গ্রেফতারকে ‘বিধিবহির্ভূত’ আখ্যা দিয়ে তারা বলেছেন, এ ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সিদ্ধান্তটি অবিলম্বে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শহিদুলের গ্রেফতারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিধি ও মানবাধিকারের বৈশ্বিক ঘোষণা, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক বিধি, এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের লঙ্ঘন আখ্যা দিয়েছেন তারা।
চিঠিতে একটি অনলাইনের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট ‘উসকানি’র অভিযোগে শহিদুল আলমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দিন পর তাকে আদালতে নেওয়া হয় এবং জাতির সুনাম ক্ষুণ্নের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, শহিদুল তার জীবন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। আদালতে নেওয়ার সময় তিনি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছিলেন। সে সময় তিনি বলেছেন, আমি একজন আইনজীবী চেয়েও পাইনি। লাঞ্ছিত করা হয়েছে আমাকে। আমার রক্তমাখা পোশাক ধুয়ে তা আবার পড়ানো হয়েছে। হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাদের কথামতো না চললে আবার আমাকে … (অস্পষ্ট)।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকারের দমনপীড়ন নিয়ে আল-জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়া এবং ফেসবুকে এ সংক্রান্ত কঠোর বিবৃতি দেওয়ার কারণে শহিদুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের ঘটনাকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ও এর সমর্থক বাহিনীর চলমান বেআইনি ও সহিংস কর্মকাণ্ডের নজির আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রাবার বুলেট ব্যবহারের সমালোচনাও করা হয়েছে এতে। এ নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগের কথাও উঠে এসেছে চিঠিতে। মুক্ত সংবাদমাধ্যমকে যে কোনও ধারার গণতন্ত্রের ‘অপরিহার্য উপাদান’ আখ্যা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, কোনভাবেই সংবাদমাধ্যমের অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। শহিদুলের ঘটনাকে ‘তার ওপর নিষ্ঠুর আচরণ’ আখ্যা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, এই ধারার কর্মকাণ্ড মুক্ত সংবাদমাধ্যমের অধিকারকে নস্যাৎ করে। তারা বলেছেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এর নিন্দা জানাই’। খোলাচিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে-
অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী জোসেফ স্টিগ্লিট, বিনায়ক সেন, জাতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট পিপলস সিভিল লিবার্টিটি ইউনিয়ন (ভারত)। অ্যাঞ্জেলা ওয়াই ডেভিস, বিশিষ্ট অধ্যাপক আমিরতা, চেতনা ও নারীবাদী গবেষণার ইতিহাস, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্তা ক্রুজ। ইলিনা সেন, প্রফেসর অ্যাডভান্সড সেন্টার ফর উইমেন স্টাডিজ, টাটা ইন্সটিটিউট ফর সোশ্যাল স্টাডিজ, মুম্বাই। জুলিথ বুটলার ম্যাক্সাইন এলিয়ট প্রফেসর, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে। ডেভিড পলুম্বো লিউ, লুইস হিউলেট নিক্সন অধ্যাপক, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
গায়ত্রী চক্রবর্ত্তী, স্পিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এন্টিজি ক্রগ, লেখক। জিওকান্দা বেলি, লেখক। ডঃ কোস্ট্যান্জা কারফা, পরিচালক, ফ্লোর্নজ-ম্যাক্স-প্লাংক-ইন্সটিটিউটের ফটোগ্রাফিক ডেস কুন্থিতিসারস্কেন ইনস্টিটিউট। শামুন জমির, পরিচালক, আকাশ: সেন্টার ফর ফটোগ্রাফি, এনওয়াইউ, আবুধাবি। নাসার ইস্যাম, ইতিহাসের অধ্যাপক ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি। রোজালিন্ড সি মরিস, অধ্যাপক, নৃতত্ত্ব বিভাগ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
এর আগে মার্কিন ভাষাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক নোম চমস্কি, ভারতীয় লেখক ও মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায়সহ বিশ্বের খ্যাতনামা লেখক-সাংবাদিক-শিল্পীরা তাকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিকতার সুরক্ষা, মানবাধিকার ও আলোকচিত্র সংশ্লিষ্ট বেশকিছু সংগঠনের পক্ষ থেকেও তাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।