রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচন আর মাত্র ২ দিন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুরু থেকেই এমন ঘটনা ঘটলেও গ্রেফতার করতে কাউকে দেখা যায়নি। এ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন উঠেছে নগরবাসীর মনে। এমন চলতে থাকলে ভোটের দিন কি হতে পারে?
গত শনিবার (১৭ জুন) বিকেল ৬টার দিকে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচার মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় শিখা (৩০) নামের এক নারীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চণ্ডিপুর এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার পরে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আহত শিখা নগরীর চন্ডিপুর এলাকার জনির স্ত্রী।
রাসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। আর ট্রাক্টার প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাউন্সিলর প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেল।
কাউন্সিলর প্রার্থী মতিউর রহমান মতি অভিযোগ করে বলেন, ১৭ জুন শনিবার পূর্ব নির্ধারিতভাবে প্রচার মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি ঝাউতলা মোড় থেকে চণ্ডিপুরে গেলে জহিরুল ইসলাম রুবেল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী পরিকল্পতভাবে আমাদের মিছিলে হামলা চালায়। হামলায় আমার প্রায় ২০ জন কর্মী সমর্থক আহত হয়েছেন। তারা সবাই রামেকে ভর্তি হয়েছেন।
তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রামেক হাসপাতালে গিয়ে মতির সমর্থক আহত শিখা ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। শিখা রামেকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। তবে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। শিখা দাবি করেন, তার পেটে লাথি মারা হয়েছে। এরপর থেকেই তিনি অসুস্থ বোধ করছেন।
এ বিষয়ে অপর প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেলের ব্যক্তিগত নম্বরে কল করা হলে তার সমর্থক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘রুবেল ভাই ব্যস্ত আছেন। এখন কথা বলতে পারবেন না।’ তবে ঘটনার পরে কাউন্সিলর প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেলের কর্মী সমর্থকরা থানার সামনে অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকেলে কাউন্সিলর প্রার্থী মতিউর রহমান মতির টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে সমর্থকরা প্রচার মিছিল বের করেন। একই সঙ্গে প্রচার মিছিল বের করেন ট্রাক্টার প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেল। দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মিছিল চন্ডিপুর প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছালে কাউন্সিলর প্রার্থী রুবেলের লোকজন মতির প্রচার মিছিলে হামলা চালায়। এসময় কাউন্সিলর প্রার্থী মতিনের সমর্থকরা প্রতিরোধ করে রুবেলের সমর্থকদের ধাওয়া করে।
নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) কাজল নন্দী জানান, দুই প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। আমরা অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ আছে। কোনো প্রার্থী এখনও অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।
এদিকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে নগরের মতিহার থানায় মামলা দুটি করেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আলাউদ্দীন ও আবদুস সামাদ।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলভি বুধপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের একাধিক কর্মী সমর্থক আহত হন। এ ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরকে দায়ী করেছেন। শনিবারও ওই এলাকায় পরিস্থিতি কিছুটা থমথমে রয়েছে। এ কারণে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আলাউদ্দীন মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার প্রতীক ঠেলাগাড়ি। আবদুস সামাদের প্রতীক ঘুড়ি। তিনি জামায়াতপন্থী শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রাজশাহী মহানগরের সভাপতি।
মহানগর পুলিশের মতিহার বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার একরামুল হক বলেন, রাতেই দুই পক্ষ থানায় মামলা করেছেন। তাঁরা উভয় পক্ষের মামলা নিয়েছেন। এখন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। এলাকায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে, সে জন্য পুলিশ রাখা হয়েছে।
মামলায় দুই পক্ষই বেশ কয়েকজন আসামির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি রেখেছেন। উভয় পক্ষ একে অপরকে মারধর ও পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ এনেছেন।
পুলিশ, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে দুই প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বের হন। কাউন্সিলর প্রার্থী আলাউদ্দীন প্রায় ১০০ মোটরসাইকেল নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জাপুর এলাকা থেকে। মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা বুধপাড়ার রাস্তা দিয়ে এসে মৌলভি বুধপাড়া এলাকায় আসে। ওই এলাকায় আগে থেকেই জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আবদুস সামাদ সমর্থকদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছিলেন।
ওই সময় আবদুস সামাদ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাকে যাওয়ার রাস্তা করে দেন। অর্ধেক মোটরসাইকেল চলেও যায়। এ সময় হঠাৎ দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। কেউ কেউ লাঠিও হাতে নেয়। এতে ওই এলাকায় সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামের প্রচার মাইকও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে প্রার্থী আলাউদ্দীনের পাঞ্জাবিও ছিঁড়ে গেছে।
মো. আলাউদ্দীন বলেন, তিনি রাতেই এই হামলার ঘটনায় মামলা করেছেন। তার দুজন কর্মী এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ দেবেন।
জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আবদুস সামাদ বলেন, ভোটের পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছেন আলাউদ্দীন ও তাঁর সমর্থকেরা। তিনি এই ঘটনায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনি মারধর, ভয়ভীতি, পোস্টার ছেঁড়ার বিষয় উল্লেখ করেছেন। আজ শনিবার তিনি নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেবেন।
জ/ন