নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সুষ্ঠ পরিবেশ নিয়ে ততই শঙ্কা বাড়ছে নগরবাসীর মধ্যে। কারণ রাজশাহীতেও বইতে শুরু করেছে এর আগে অনুষ্ঠিত হওয়া খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের হাওয়া। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেকে হোসেন বুলবুল সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বিদ্বেষী আচরণ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে আসছেন। বিনা পরোয়ানায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী বুলবুলের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, নেতাকর্মীদের মারধর ও অফিস ভাংচুর এবং সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তিন এমপির আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগের অন্তত ২১ অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগগুলো দিয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এ্যাড. তোফাজ্জল হোসেন তপু। তপু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরেও দৃশ্যমান কোন অভিযোগের সমাধান হয়নি। একের পর এক বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনা পরোয়নায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পুরাতন মামলা দিয়ে চালান দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে করা অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাজশাহীর কয়েকজন এমপি নৌকার পক্ষে সরাসরি ভোট চেয়েছেন। গত বৃস্পতিবার এক সমাবেশ থেকে রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা এবং নাটোর-২ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। এমপিদের এমন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দিতে শনিবার বিকালে খোদ বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে যান। তার সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুসহ আরো কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগে মোট আটটি বিষয় ইসিকে জানানো হয়। এরমধ্যে প্রথমেই রয়েছে তিন এমপির নির্বাচনী সমাবেশ করার বিষয়টি। অন্য অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নেতাকর্মীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার। একের পর এক অভিযোগ করেও নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা বলে ইসির বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এদিকে, গত ১৭ই জুলাই বিএনপির পথ সভায় ককটেল বিস্ফোরণের পর কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর গত শনিবার রাতে মন্টুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছে। এমনকি তারা রাতের বেলা বাড়িতে থাকা বন্ধ করে দিয়েছে। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়াও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নিয়মিত ভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছিল নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নতুন করে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না। ইসির এই ঘোষণা কেবল ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে আরো বলা হচ্ছে কোনো মামলা বা পরোয়ানা ছাড়াই এসব নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
বিএনপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত পুলিশ তাদের অধীনে থাকলেও যদি কোনো আগের মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা হয় তাহলে এ ব্যাপারে ইসির কিছু করণীয় নেই। যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় আগে থেকে মামলা আছে বলে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন। তাই এ ব্যাপারেও ইসির কিছু করণীয় নেই। তিনি বলেন, বিএনপির সব অভিযোগই তদন্ত করা হয়। বেশির ভাগ সময়ই কোনো সত্যতা পাওয়া যায় না।
মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, খুলনা গাজীপুরের নির্বাচন দেশের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাই সেখানে ভোট করেছে। ওই দুই সিটির অবিশ্বাসের দানা রাজশাহীর সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও দৃঢ় হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ইসির প্রতি কখনোই আস্থা হারাতে চাই না। আমরা চাই, তারা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুন্দর একটা নির্বাচন উপহার দিক। জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটুক। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তার দায় ইসিকেই নিতে হবে।
আ’লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন কৌশলে বিএনপির অভিযোগগুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচনী কার্যক্রমে বাধা প্রদান সম্পর্কে বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা কোথাও তাদের প্রচারনায় বাধা দেয়নি। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ করে বলেন, তারাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ব করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে।
তবে গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক এক প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠ রাখতে পুলিশের নিয়মিত গ্রেফতার অভিযান চলবে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হচ্ছে বলে তার জানা নেই। খোঁজ নেওয়া হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।