বিশেষ প্রতিবেদক :
প্রচার-প্রচারণা শেষে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হবে। সিটি নির্বাচন উপলক্ষে যে কোন অপ্রিতীকর ঘটনা এড়াতে ও আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে রাজশাহী মহানগরীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ান র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
এবার রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর পদে মোট ২১৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে ৫ জন, কাউন্সিলর পদে ১৬০ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রার্থী রয়েছে।
মেয়র প্রার্থীরা হচ্ছেন, বিএনপি ও ২০ দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও নগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, আ’লীগ ও ১৪ দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও নগর আ’লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাড. মুরাদ মোর্শেদ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান।
রাসিক নির্বাচনে ১৩৮ কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১৩৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১১৪ টি কেন্দ্রকে ঝুকিপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার উপর ভিত্তি করে এসব কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্য কেন্দ্রের তুলনায় এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত ১০ জুলাই রাসিক নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পরপর মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে যায় নগরী। ১১ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত জোরতালে চলে প্রচার-প্রচারণা। পিছিয়ে ছিলেন না কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী
কাউন্সিলরগণও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালান। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করে প্রার্থীরা নিজ প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালান। শিল্পীদের গানে গানেও প্রচারণা চালানো হয়।
বিশেষ করে বড় দুই দলের হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপি মনোনীত মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আ’লীগ মনোনীত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রচার-প্রচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা প্রচার-প্রচারণা চালান। পিছিয়ে ছিলেন না তাদের সহধর্মিণীরাও। বুলবুলের সহধর্মিণী রেবেকা সুলতানা সিমি ও লিটনের সহধর্মিণী নগর আ’লীগের সহসভাপতি শাহিন আক্তার রেণীও । দিনরাত নিজ স্বামীর পক্ষে ভোটের প্রচারণা চালান তারা। এ ছাড়া দুই দলের কেন্দ্রীয় ও আশেপাশের জেলা উপজেলার নেতার প্রচার-প্রচারণা চালান।
এদিকে, রাসিক নির্বাচন উপলক্ষে নগরজুড়ে র্যাব ও বিজিবির বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। ২৮ থেকে ৩১ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত এই দুই বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবে। নির্বাচন উপলক্ষে যেকোন ধরণের অপ্রিতীকর ঘটনা এড়াতে র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নগরীতে ১৯ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহলসহ নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব পালন শুরু করে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামীম মাসুদ আল ইফতেখার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ প্লাটুন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে এবং ৪ প্লাটুন রিজার্ভ রাখা হবে। তারা বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হবে। বিজিবি সদস্যরা টহল ও স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তার দিকে সতর্ক নজর রাখবেন। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন বলেও জানান এই বিজিবি কর্মকর্তা।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০১৮ উপলক্ষে র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ান র্যাব-৫ ৪০০ সদস্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে র্যাব সদস্যরা নগরজুড়ে টহল দিতে শুরু করে। আগামী ৪ দিন পর্যন্ত র্যাব সদস্যরা নগরে টহল দিবে। ২৮ তারিখ থেকে ৩১ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত র্যাব মাঠে থাকবে। র্যাব-৫ এর মিডিয়া বিভাগ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
মিডিয়া বিভাগ থেকে জানানো হয়, রাসিক নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ রাখতে র্যাব সদস্যদের নগরের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে। নগরজুড়ে র্যাব সদস্যরা টহল দিবে। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন রাসিক নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সামনেও র্যাব অবস্থান নিবে বলেও আরো জানানো হয়।
ভোটের দিন রাজশাহী মহানগরীতে ৩ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠে থাকবে। পুলিশ সদস্যরা ভোট কেন্দ্র, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে, চেকপোস্ট ও টহল দিবে। এ তথ্য নিশ্চিত করে নগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, ভোটের দিন ৩ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠে থাকবে। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠ রাখতে পুলিশ কাজ করবে।
মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এরমধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন নারী ভোটার রয়েছেন। ১৩৮টি ভোট কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ জুলাই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।