নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে। ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। প্রতীক বরাদ্দের পর পুরো রাজশাহী মহানগরী মেয়র, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও কাউন্সিলরদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে যায়। মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। ভোটে বিজয়ী হতে তারা ভোটারদের উন্নয়ন মূলক ও নগর উন্নয়নে বিশেষ প্রতিশ্রুতি দেন। দিন নাই, রাত নাই সবসময় প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। নিজ প্রার্থীর পক্ষে যথাসাধ্য মানুষকে বুঝিয়েও ভোটের দাবি করেন।
শুধু প্রার্থীরাই নয় প্রার্থীর পক্ষ থেকে তার নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। এমনকি তারা বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে তারা নিজ প্রার্থী জয়ী হলে বিভিন্ন উন্নয়ন হবে তার চিত্র তুলে ধরেন। স্থানীয় নির্বাচন হলেও সারাদেশের মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে এ নির্বাচন। সিটি নির্বাচনে ভোটের প্রচারে আশেপাশের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচারে নেমে যান। এমনকি আশেপাশের জেলা-উপজেলার
বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা রাজশাহী মহানগরীতে এসে নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালায়।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবার ৫ জন মেয়র প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও নগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, আ’লীগ মনোনীত মেয়র প্রাথী ও নগর আ’লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাড. মুরাদ মোর্শেদ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান।
তবে নির্বাচনে প্রধান দুই দলের হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন, বিএনপির দলীয় মেয়র প্রার্থী সদ্য বিদায়ী মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আ’লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়ল এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন, আ’লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। পোস্টার ও ফেস্টুনে নগরী ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি তারপক্ষে অনেক নেতাকর্মী ভোটের মাঠে নামেন।
বসে ছিলেন তার সহধর্মিনীও। সমাজসেবী ও নগর আ’লীগের সহসভাপতি শাহিন আক্তার রেনীও দিনরাত সবসময় প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। মেয়র প্রার্থী লিটনের পক্ষে গণসংযোগ ছাড়াও নগর জুড়ে ডিজিটাল প্রচারণা ও গম্ভীরা গানের মাধ্যমেও প্রচারণা চালানো হয়। নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করে মাঠে প্রচারণা চালান কয়েকজন এমপি। যদিও পরে তারা আর নামেন নি।
এদিকে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দিনরাত নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। উদ্দেশ্য একটাই আবারো রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নগরপিতা হওয়া। তবে গতবারের নির্বাচনের তুলনায় এবার নেতাকর্মীদের কম মাঠে পেয়েছেন তিনি।
তবে তার পক্ষে সবসময় নির্বাচনী মাঠে ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও রাসিকের সাবেক মেয়র এবং এমপি জননেতা মিজানুর রহমান মিনু ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল হক মিলন। তারা তার পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালানোয় ব্যস্ত ছিলেন। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, তার পুত্রবধু নিপুন রায়, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকতসহ অন্যান্য নেতারা।
বুলবুলের পক্ষে তার সহধর্মিনী রেবেকা সুলতানা সিমিও মাঠে নামেন। তিনিও প্রচারণার শুরু থেকে নগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন। মেয়র থাকাকালে তার স্বামীর উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করছেন।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্র্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমানও প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে সব শান্তিপূর্ণভাবে হলেও নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় বিএনপির পথসভায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিকসহ তিনজন আহত হয়। ওই ঘটনায় রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মতিউর রহমান মন্টু ও হিমেল নামের একজন গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ তাদের রিমান্ডেও নিয়েছিলেন।
একেবারে শেষের দিকে এসে একটি বেসরকারী চ্যানেলের অনুষ্ঠানে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা হয়। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে তাদের অনেক নেতাকর্মীইে গ্রেফতার করা হয়েছে ওয়ারেন্ট ছাড়াই। আরো অভিযোগ রয়েছে, অভিযোগ দিয়েও নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ভোট উপলক্ষে মেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২৭ তারিখের মধ্যে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকার বাইরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাড়ী চলাচলের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের রাসিক নির্বাচনে মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মোট প্রার্থী ২১৭ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৫ জন, কাউন্সিলর প্রার্থী ১৬০ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৫২ জন।
মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এরমধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন নারী ভোটার রয়েছেন। ১৩৮টি ভোট কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ জুলাই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/জেএন
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।