রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের পদোন্নতিতে অনিয়ম, সরকারী বিধি লঙ্ঘন ও স্বজনপ্রিতির অভিযোগ উঠেছে। সিনিয়রদের পদোন্নতি না দিয়ে যোগসাজস করে জুনিয়রদের পদোন্নতি দেয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯জুলাই) রামেক হাসপাতালের অফিস সহায়ক শেখ গোলাম মোস্তফা পদোন্নতির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও রামেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের পদোন্নতির নোটিশ প্রকাশ করে। পদোন্নতির নোটিশ অনুযায়ী গত ২৩ ফেব্রুয়ারী অফিস সহায়ক হতে অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি পাওয়ার আসায় মোট ১২জন কর্মচারি আবেদন করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে এই পদোন্নতি পরীক্ষার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পুনরায় গত ১৩ জুলাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি পরীক্ষা নেয়ার জন্য বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে। একই সাথে লিখিত পরীক্ষার জন্য আবেদন কারিদের চিঠি দেয়া হয়। গত ১৫জুলাই কম্পিউটারের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। এরপর গত ২৪ জুলাই পদোন্নতি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল ঘোষণার পর আবেদনকারীরা জানতে পারেন মোট চারজনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে শুধু মাত্র একজন সিনিয়র রয়েছেন। আর বাকি তিনজন জুনিয়র। এতে ক্ষোভ দেখা দেয় হাসপাতালের কর্মচারিদের মধ্যে।
অভিযোগে শেখ গোলাম মোস্তফা উল্লেখ করেছেন, পরীক্ষার দিন বোর্ড এর দায়িত্বরতরা কম্পিউটারে লেখা-লেখির জন্য আমাদের নিদের্শ দেন। বোর্ডের সময় ছিল ১০ মিনিট। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ৫ মিনিট না যেতেই দায়িত্বরতরা আমাকে লেখা বন্ধ করতে বলেন। তাদের কথা মত আমি লেখা বন্ধ করে দেই। তারপর হাসপাতালের পরিচালক আমাকে তার অফিসে ডাকেন। তিনি ডেকে পদোন্নতির বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করে পদোন্নতির বাইরে প্রশ্ন করেন। এসময় রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস আমাকে পদোন্নতি না দেয়ার জন্য পরিচালকের সামনে বেশ কিছু উল্টা-পাল্টা কথা বলেন। কারণ ডা. সাইফুল ফেরদৌস কাকে কাকে পদোন্নতি দেয়া হবে সে বিষয়টি আগে নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। যার কারণে পরিচালকের সামনে আমাকে হেয়পতিপন্ন করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের চাকরির বয়স ৭বছরের মধ্যে। কিন্তু ১৫ থেকে ১৬বছর চাকরির বয়সসম্পুর্ন কর্মচারিরাও পদোন্নতি পাওয়ার আসায় আবেদন করেছিলেন। তারা পরীক্ষা বোর্ডেও উপস্থিত থেকে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের পদোন্নতি হয়নি। আবেদন কারীদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্য সম্পন্ন কর্মচারিদেরও পদোন্নতির বাইরে রাখা হয়েছে। এছাড়াও পদোন্নতি পাওয়া জুনিয়র এমএলএসএস রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অন্যদের নামেও রয়েছে হাসপাতালে ভর্তি রোগিদের কাছ থেকে কাউন্টারে অতিরিক্ত টিকিটের টাকা নেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ। অথচ সিনিয়রদের বাদ দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত জুনিয়রদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক নিয়ম বহির্ভুতভাবে সরকারী চাকরির বিধিলঙ্ঘন করে ওই চারজনকে পদোন্নতি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগকারী বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
এব্যাপারে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মূলত পদোন্নতি দেয়া হয়েছে কম্পিটারের যারা পারদর্শী ছিলেন তাদের। পদোন্নতি পরীক্ষায় যারা কম্পিটারের ভাল করেছে তাদের নেয়া হয়েছে। সিনিয়র হলেও যারা কম্পিউটারে পারদর্শী ছিলেন না তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি এখনো অভিযোগ হাতে পাইনি। অভিযোগকারী কম্পিউটারে পারদর্শী হওয়ার পরও যদি পদোন্নতি থেকে বাদ পড়ে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এম/আর নি