নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে রাজশাহী বিভাগ ছাড়াও রংপুর ও খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। বড় হাসপাতাল হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে এসে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগী ও তার স্বজনদের। আর রামেক হাসপাতালে ইনডোর ও আউডোরে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীর সমাগম হয়। রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসার পরেই পড়ে যান দালালের খপ্পরে। রোগীর জন্য ওৎ পেতে থাকে রোগী ধরা দালালরা। বিশেষ করে আউটডোর থাকে দালালের দখলে। অথচ হাসপাতালে রোগীর নিরাপত্তায় পুলিশ বক্স ও আনসার ক্যাম্প রয়েছে। কিন্ত দালালরা
পুলিশের সামনে দিয়েই রোগীকে বাইরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গেলেও তেমন তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়না। এর অন্যতম প্রধান কারণ পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এএসআই রফিকুল ইসলামের সাথে বাইরের কিছু নিম্নমানের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের সাথে সখ্যতা রয়েছে। আর সেই সখ্যতার কারণে চিহ্নিত পেশাদার দালালদের প্রকাশ্যে কাজ করলেও কোন বেগ পেতে হয়না। প্রায় রোগীরা দালালের হাতে প্রতারণার শিকার হন। এমনকি কম টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেশি টাকায় করাতে বাধ্য হয়। তবে মাঝে মধ্যে বক্সের পুলিশ সদস্যরা তোড়জোড় করলেও সেটি লোক দেখানো। কারণ সেটি সাময়িক। পরক্ষণেই দালালরা তাদের কার্যক্রম জোরতালে করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগ খেলা থাকে। আর সকাল ৮টার পর থেকেই দালালরা হাসপাতালের বিভিন্ন পয়েন্টে ওৎ পেতে থাকে। রোগী চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হলেই তারা বাইরে কম টাকায় পরীক্ষা করিয়ে দিবে বলে নিয়ে চলে যায়। অথচ যারা দালালি করে তারা সবাই চিহ্নিত। অথচ এরা দাপটের সাথে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এ সময় পাশে পুলিশ সদস্য ডিউটি করলেও দেখে না দেখার ভান করে।
কারণ ইনচার্জের সাথে দালালদের সখ্যতার কারণে নিম্নমানের সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর দালালরা আরো দাপটের সাথে কাজ করে। অথচ সেখানে পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্যরা ডিউটি পালন করে। তারপরও দালালরা কোনভাবেই বাধার শিকার হয়না। এ নিয়ে
রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিন্ত বাইরে থেকে আসার কারণে কেউ কিছু বলতে পারে না। তবে লোক দেখানোর জন্য মাঝে মাঝে দুই একজন দালালকে তারা আটক করে।
নাইনা নামের এক নারী অভিযোগ করে বলেন, আমি চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর একজন লোক আমাকে বলেন, আমার সাথে গেলে দ্রুত কম টাকায় পরীক্ষা করিয়ে দিব। সে যে দালাল আমি বুঝতে না পেরে চলে যাই। সে সময় পাশেই পুলিশ সদস্য ডিউটি করছিলেন।
রাবেয়া নামের অপর এক নারী বলেন, পুলিশ সদস্য থাকার পরেও আমি দালালের খপ্পরে পড়েছি। আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দালাল বাইরের একটি ডায়াগনস্টিকে নিয়ে যায়। এরপর রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক বলেন, এ রিপোর্ট চলবেনা আবার করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দালালরা রোগীদের ভাগিয়ে বাইরের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যায়। অথচ পুলিশ তাদের কিছু বলেনা।
রোগীদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে কি এমন কারণে দালালরা বাইরে রোগী ধরে নিয়ে যেতে বাধা পায়না তা তাদের বোধগম্য নয়। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে আউটডোরে
কর্মরত এক ব্যক্তি বলেন, দালালরা প্রতিনিয়ত রোগী ধরে বাইরে নিয়ে চলে যায়। কিন্ত পুলিশ বা আনসার সদস্য কারো কেন ভূমিকা দেখিনা। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, এভাবে রোগীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হন। তাই বিষয়টি পুলিশের উর্দ্ধতনদের খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এএসআই রফিকুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। পরে আবার কল দিলে তিনি বলেন, অফিসে আসেন সরাসরি কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, লিখিতভাবে কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
এসআর