ঢাকাসোমবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রামেক হাসপাতালের বাথরুম-টয়লেটগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে

omor faruk
ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯ ৯:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিবেদক : 
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাথরুম ও টয়লেটগুলো নিয়মানুযায়ী পরিস্কার না করায় দিনে দিনে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রোগীদের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর লোকজন টয়লেট ব্যবহারের পর পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার না করা এবং তার মধ্যেই স্যানিটারি ন্যাপকিন ফেলে দেওয়ায় এমন দুরবস্থা হয়েছে। যদিও রোগীদের এ বিষয়ে সচেতন করা হয়। তারপরও রোগীর লোকজন টয়লেট ব্যবহার করার পরে পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করছেনা। শুধু তাই নয় রোগীর স্বজনরা সেখানে প্রসাব ফেলে দেয় ও ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস ফেলে বাথরুম টয়লেটগুলো নষ্ট করে ফেলছে। এতে টয়লেট জ্যাম হয়ে যায় এবং তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বাথরুম-টয়লেটগুলোকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে রোগীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। আবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক শ্রেণীর রোগী ও তাদের স্বজনরা এ কারণে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। টয়লেটগুলো অপরিস্কার থাকায় তা থেকে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। যার

কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর বাথরুম ও টয়লেটগুলো ব্যবহার করা দায় হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের ইনডোরে প্রায় ৪২টিন বেশি ওয়ার্ড রয়েছে আর এর প্রত্যেকটিতেই রোগীদের জন্য বাথরুম ও টয়লেট রয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীদের ব্যবহারের জন্য বেশ কিছু টয়লেট রয়েছে। বাথরুম-টয়লেটগুলো পরিষ্কারের জন্য হাসপাতালে রাজস্ব ও অস্থায়ী কর্মচারী মিলে ১৩০ জন সুইপার রয়েছে। এরমধ্যে রাজস্ব ৭৭ জন ও অস্থায়ী ৫৩ জন। টয়লেটগুলো পরিষ্কারের জন্য হাসপাতালে কর্মরত সুইপারদের তিনভাগে ডিউটি ভাগ করে দেয়া হয়েছে। যারা পর্যায়ক্রমে তাদের নিজ নিজ ডিউটি পালন করবে। দিনে তিনবার সকাল, দুপুর এবং রাতে ১ বার করে পরিষ্কার করার নিয়ম রয়েছে। ডিউটি অনুযায়ী প্রত্যেক সুইপার ওয়ার্ডের বাথরুম-টয়লেটগুলো দিন-রাতে তিনবার পরিষ্কার হওয়ার কথা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া নিয়মানুযায়ী বাথরুম-টয়লেটগুলো পরিষ্কার করলে তা রোগীদের ব্যবহারের উপযোগী থাকার কথা। কিন্তু সুইপাররা কর্তৃপক্ষের দেয়া নিয়মের তোয়াক্কা না করে বাথরুম-টয়লেটগুলো পরিষ্কার করেনা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে,

সুইপাররা সকাল এবং দুপুরে পরিষ্কার করলেও রাতের বেলা পরিষ্কার করেনা। যার কারণে টয়লেটগুলো দিন দিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন অবহেলা-অযত্নের কারণে এ বেহাল দশা হয়েছে। যার কারণে বর্তমানে অনেক ওয়ার্ডের টয়লেটগুলোতে প্রবেশ করাই দায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মহিলা ওয়ার্ডের বাথরুম-টয়লেটগুলোর আরো বেশি বেহাল দশা বলে রোগী ও স্বজনরা জানিয়েছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, সুইপাররা রাতের বেলা ডিউটি না করার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, রাতের বেলা হাসপাতালের সর্দার-জমাদারদের ডিউটির নিয়ম থাকলেও তারা কর্মস্থলে রাতে না থাকার কারণে সুইপাররাও ডিউটি ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে যায়। বেশি দিনই জমাদাররা রাতের বেলা থাকেন না। এ কারণে সুইপাররা ফাঁকি দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সরজমিনে হাসপাতালের ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাথরুম-টয়লেটগুলোতে ঢোকার কোন পরিবেশ নেই। টয়লেট-বাথরুম থেকে ছড়ানো দূর্গন্ধে টয়লেটে যাওয়ায় দায় হয়ে পড়েছে। বাথরুমের দরজার সামনেই বিভিন্ন ধরণের ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এগুলো সুইপাররা না পরিষ্কারের কারণে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং টয়লেট গুলো ভালভাবে পরিষ্কার না করার কারণে তা থেকেও ব্যপক দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ ছাড়াও হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর বাহিরে বিভিন্ন খাবার

সামগ্রীর উচ্ছিষ্ট এবং রোগীর লোকজনের পরিত্যক্ত বিভিন্ন জিনিস দেখতে পাওয়া যায়। ওয়ার্ডের মধ্যেকার বাথরুম-টয়লেটগুলোর অবস্থায় শুধু খারাপ নয় এর বাহিরের অবস্থা আরো খারাপ। হাসপাতালের মধ্যে অবস্থিত ওয়ার্ডগুলোর নিচতলা থেকে উপর তলায় উঠার সময় ব্যপক দূর্গন্ধ ছড়ায়। দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ওয়ার্ডগুলোতে থাকা রোগীর লোকজন নিজেদের আনা বিভিন্ন দ্রব্য ফেলে দেয়। যাতে নিচের ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। ওয়ার্ডের বাহিরে এবং নিচের মাঠে পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনার স্তুপ থেকে প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়ায়। যে ময়লা-আবর্জনাগুলো সুইপাররা নিয়মিত পরিষ্কার করেনা বা সেখান থেকে নিয়ে যায়না। যে দূর্গন্ধের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর লোকজন ব্যাপক অস্বস্তির মধ্যে পড়েন। যাতে চিকিৎসাধীন রোগীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডের বাথরুম-টয়লেটে প্রয়োজনীয় কাজে যেতে পারেনা। তারা বাহিরের বাথরুম টয়লেটে টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আসে। তবে হাসপাতালের টয়লেটগুলোর এ অবস্থায় হওয়ার জন্য শুধু সুইপাররাই দায়ী নয়। এর জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর অমনোযোগীতা ও খামখেয়ালিপনার কারণে এর পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। রোগীর স্বজনরা টয়লেট

ব্যবহারের পরে পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করেন না। আবার অনেক সময় রোগীর ব্যবহার্য অনেক জিনিস ফেলে রেখে এর পরিবেশ নষ্ট করে। টয়লেট ভালো রাখতে রোগীদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর আত্মীয় জানান, আমি আমার রোগীকে নিয়ে গত কয়েকদিন আগে হাসপাতালে আছি। হাসপাতালে আসার পর থেকে দেখছি সুইপাররা বাথরুম-টয়লেটগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করেনা। এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক প্রশাসন ডা. মোঃ এনামুল হক বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেশি। রোগীদের সাথে তাদের স্বজনরাও থাকে। যারা টয়লেট ব্যবহারের পরে পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করেন না। আবার অনেক সময় তারা রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলে রাখে। সুইপাররা নিয়মিত ডিউটি করেনা রোগীদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সুইপাররা ডিউটি করে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম। জনবল বাড়লে বাথরুম-টললেটগুলো আরো ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে। তারপরও কেউ ডিউটিতে ফাঁকি দিলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোগীদের সচেতনতা বাড়লে টয়লেটের পরিবেশ ভালো থাকবে।

খবর ২৪ ঘণ্টা/আরএস 

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।