নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে রোগী ও লাশবাহী গাড়ীর দালালরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ও গেটম্যানকে ম্যানেজ করে প্রবেশ করে দালালী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা বিপাকের মধ্যে পড়ছেন।
এভাবে প্রতিদিনই দালালরা হাসপাতালের ওয়ার্ডে অনায়সে প্রবেশ করছে। তারপরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি হাসপাতাল পুলিশ বক্স ও আনসারদেরও এ নিয়ে কোন কাজ করতে দেখা যায় না। যার কারণে দালালরা বিনা বাধায় হাসপাতালে প্রবেশ করে লাশের স্বজনদের জিম্মি করে দ্বি-গুণ ভাড়া আদায় করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে হলে রোগীদের পাশ থাকা জরুরী। পাশ না থাকলে গেটম্যানরা রোগীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না। কিন্তু রোগী ও লাশবাহাী দালালরা শুধু হাসপাতালের ভেতরেই নয় ওয়ার্ডের ভেতরে প্রবেশ করে মৃত রোগীর স্বজনদের সাথে ভাড়ার বিষয়ে কথা বলে। কোন রোগী যদি যেতে না চায় তাহলে তাকে জিম্মি করা হয়। আর যেতে চাইলেও দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হয়। এটি রামেক হাসপাতালের নিত্যদিনের পুরাতন ঘটনা। হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোন রোগী মারা গেলে সবার আগে খবর চলে যায় দালালদের কাছে। রোগী গাড়ীর চালকদের কাছে পৌঁছার আগেই তারা ওয়ার্ডে রোগীর কাছে পৌঁছে ভাড়ার বিষয়ে দেন দরবার করে।
ওয়ার্ডে কোন রোগী মারা গেলেই গাড়ীর চালকরা সবার আগে জানতে পারে। ওয়ার্ডে লাশবাগী গাড়ী সিন্ডিকেটের দালাল দিনের পর দিন অবস্থান করে। তারপরও পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তাকে আইনের আওতায় আনতে পারে না। বিশেষ করে পুলিশকে এ নিয়ে কোন কাজ করতে দেখা যায় না।
সরজমিনে গত রোববার রামেক হাসপাতালের ৭নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একজন গাড়ীর দালাল প্রবেশ করে নিজেই ট্রলি ঠেলে রোগী নিয়ে যাচ্ছেন। কর্তব্যরত এক নার্স তাকে বাধা দিলে নার্সের সাথেই মেজাজ নিয়ে কথা বলে সেই দালাল। আর ওয়ার্ডে থাকা অন্যান্য রোগীর স্বজনদের সাথেও খারাপ আচরণ করে। এভাবে প্রকাশ্যে একজন দালাল ওয়ার্ডে অবস্থান করলেও পুলিশ বা আনসারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। জরুরী বিভাগের গেটেই একজন পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত থাকে ও ভেতরে প্রবেশের সময় গেটম্যানরা পাহারা দেয়। এ ছাড়াও হাসপাতালের প্রায় ওয়ার্ডে আনসার সদস্য থাকে। তারপরও দালালরা কিভাবে হাসপাতালে প্রবেশ করে এ নিয়ে রোগীদের মধ্যে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক রোগী বলেন, হাসপাতালে রোগীদেরই পাশ ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়না। তাহলে দালালরা কিভাবে প্রবেশ করছে? গাড়ীতে বেশি ভাড়া চাইলে কর্তব্যরত পুলিশদের বলেও লাভ হয় না। পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয় না? নাকি দেখেও তারা না দেখার ভান করে? এটা আমরা বুঝি না।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে এভাবেই অবাদে প্রবেশ করছে এক দালাল।
আরেক রোগী বলেন, সবকিছু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখে। আর পুলিশ আনসরা সদস্যরা বিপদে পড়ে সাহায্য চাইলে উপকারে আসে না। আর ভাড়ার ব্যাপারে সাহায্য চাইলে তারা বলে কিছু কররা নেই।
তাহলে কি আইনের উর্দ্ধে দালালরা? কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। দ্রæত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাসপাতালের পরিচালক ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, ওয়ার্ডে রোগী মরলে কিভাবে দালালরা আগে জানতে পারে? নিশ্চয় কেউ তাদের জানায় বা নিজেদের দালালদের মাধ্যমে জানতে পারে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আব্দুল্লাহ নামের আরেক রোগী বলেন, আমার স্বজনকে বাড়ি নিয়ে যাবো। এর আগে একই স্থানে দুই হাজার টাকাই নিয়ে গেছি। কিন্ত ৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। কর্তব্যরত পুলিশকে বলেও কোন লাভ হয় নি।
দীর্ঘদিন ধরে লাশবাহী ও রোগীবাহী গাড়ীর চালকরা রোগীদের জিম্মি করে আসলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় না। কিছুদিন আগে মাইক্রোস্ট্যান্ড উঠিয়ে দিলেও আবার তারা গাড়ী নিয়ে অবস্থান শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অথচ উচ্ছেদের সময় বলা হয়েছিল এবার স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, হাসপাতালে কোন রোগী নিজের বা অন্য কোন গাড়ীতে যেতে চাইলেও পারেনা। আর অন্য গাড়ী বা নিজের গাড়ীতে যেতে চাইলে লাশবাহী গাড়ী সিন্ডিকেটকে চাঁদা দিয়েই যেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এমন নিয়ম চলে আসলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় না।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ভেতরে কোন গাড়ীর দালাল প্রবেশ করলে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বাইরের যে বিষয়টি সেটি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দেখবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে