নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক এনামুল জহিরকে মারধর করে উল্টো তারাই কর্মবিরতি শুরু করছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টা থেকে তারা এ কর্মবিরতি শুরু করে। একসাথে সব ইন্টার্ন চিকিৎসক তাদের ডিউটি ছেড়ে দিয়েছে। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন।
কর্মবিরতীর সত্যতা নিশ্চিত করে রাজশাহী রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. কামাল বলেন, গত রাতেই ওই ঘটনার সমঝোতা হয়ে গিয়েছিল। তারপর ও আজ রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে তারা আন্দোলন করছে। তাই আমরাও কর্মবিরতীতে চলে গেছে। পরবর্তী পদক্ষেপ পরে জানানো হবে।
তিনি আরো জানা, গত বুধবার রাতে ৩০ নং ওয়ার্ডে রাবির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এনামুল জহির ইন্টার্ন চিকিৎসক পিংকিকে ধাক্কা দেয়। এতে ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক প্রতিবাদ জানালে শিক্ষক জহির তাকে ননসেন বলে। এরপর ওই শিক্ষক ক্ষেপে গিয়ে পিংকিকে ফাকিং গার্ল বলে সম্বোধন করে। এভাবে তিনবার বলায় পিংকি বিষয়টি সবাইকে জানায়।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, তারা এখনো কর্মবিরতিতে যায়নি। বিষয়টি আমি দেখছি।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার রাতে শিক্ষক এনামুল জহির হাসপাতালের ৩০ নং ওয়ার্ড দিয়ে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার সময় ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক পিংকির সাথে তার একটু ধাক্কা লাগে। এতে ওই নারী চিকিৎসক তাকে অপমানজনক খারাপ কথা বলে। তার কথার প্রেক্ষিতে ওই অধ্যাপক তাকে ননসেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় পিংকি মোবাইল ফোনে বিষয়টি আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক কামালকে জানায়। কামাল তাৎক্ষনিক সবাইকে ফোনে ডেকে নিয়ে ৩০ নং ওয়ার্ডে ছুটে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে কর্তব্যরত নার্সরা অধ্যাপককে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে তালা দেয়। কিন্ত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সেই তালা ভেঙ্গে তাকে বাইরে বের করে ব্যাপক মারধর করে। তাদের বেধড়ক মারধরে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। খবর পেয়ে রাজপাড়া থানার ওসি তদন্ত গোলাম মোস্তফা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরে আহত হলেও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানার পরে হাসপাতালের পরিচালক ঘটনাস্থলে যায়। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকার চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে।
এদিকে, সামান্য বিষয় নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে ইন্টার্নদের মারমুখী আচরণকে ভাল চোখে দেখছেন না হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। তারা বলছেন, সামান্য বিষয় নিয়ে রোগীর স্বজনদের মারধর করা কোন ডাক্তারের কাজ নয়। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক। এর বিচার হওয়া উচিত। নাম না প্রকাশ করার শর্তে জেসমিন নামের এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, রোগীর আত্মীয়কে মারধর করা ইন্টার্ন চিকিৎসকের পেশায় পরিণত হয়েছে। তারা মারধর করে পার পেয়ে যাওয়ায় এমন সাহস দেখাচ্ছেন। তাদের যতি আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয় তাহলে এমন ঘটনা আর ঘটবে না। আরেকজন বলেন, এরা ডাক্তার নয় কসাই। নামেই এরা ডাক্তার।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন আগেও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনকে মারধর করে। ওই ঘটনার কয়েকদিন আগে আরেক রোগীর স্বজনকে মারধর করে তারা। এভাবে একের পর এক মারধর চালিয়ে গেলেও হাসপাতাল পরিচালক তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়না।
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার ওসি তদন্ত গোলাম মোস্তফা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অধ্যাপককে উদ্ধার করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি কখনোই সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন রিসিভ করেন না। হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেন।
এদিকে, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক এনামুল জহিরকে সামান্য ঘটনায় বেধড়ক মারধরের প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা বিশ^বিদ্যালয়ের মূল গেটে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। তারা দোষী ইন্টার্ন চিকিৎসককে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
খবর পেয়ে মতিহার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। শত শত শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহলের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ তারা কথায় কথায় রোগীর স্বজনদের মারধর করে। এমনকি একজন বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষককেও তারা মারধর করতে ছাড়েনি। এ জন্য তারা বিক্ষুদ্ধ হয়ে হয়েছে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে