রাবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ শিবির নেতাকর্মীকে বেধরক মারধর করে পুলিশে সোপর্দের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শিবির এবং সাথে সাথে ছাত্রলীগকে সমুচিত জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ছাত্রশিবির। তবে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ-শিবিরের পাল্টাপাল্টি হুশিয়ারির ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
আটককৃতরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সদস্য ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তুহিন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রহমতুল্লাহ, শাহরিয়ার তানজিম ও আব্দুল কাদের, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরিফুর রহমান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইয়াকুব, সংস্কৃত বিভাগের মিজানুর রহমান, নগরীর লোকনাথ স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বি ও রাজশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তন্ময়। এদের মধ্যে তুহিন, কাদের এবং ইয়াকুবের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে ৯ জনই বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আমরা ৯ জনের কাছে শিবির চাঁদার রশিদ, নির্বাচনী লিফলেট, ক্যালেন্ডার সহ সম্পৃক্তার বিভিন্ন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা শিবিরের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী হওয়ায় তাদের পুলিশে দিয়েছি। বাকিদের ছেড়ে দিয়েছি” ।
এদিকে শিবির নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মারধরের এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শিবির। বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় রাবি শিবির সভাপতি লাবিব আবদুল্লাহ ও সেক্রেটারি নাবিল আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগের এ ধরনের হামলা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এ ঘটনা একাধিকবার জানানো সত্ত্বেও হল প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে আটককৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন।পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের নীরব দর্শকের ভূমিকায় আমরা স্তম্ভিত। পুলিশের কাছে আমাদের উদাত্ত আহবান আটককৃতদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করবেন না। কারণ যেকোন বৈধ সংগঠন সমর্থন করা সকলের সাংবিধানিক অধিকার।
তারা আরো উল্লেখ করেন , এভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ শিবির কর্মীদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকলে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হলে ছাত্রজনতা আর নিরব ভূমিকা পালন করবে না। ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে এর সমুচিত জবাব দিবে। বিবৃতিতে তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের আহবান জানান।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, “শিবির একটি জঙ্গী সংঘটন,তারা যদি ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে এবং তাদের যে কোন ধরনের অপতৎপরতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে সব সময় প্রস্তত রয়েছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করা হলে শক্তভাবে শিবিরকে প্রতিহত করা হবে।
জানতে চাইলে নগরীর মতিহার থানার ওসি মাহাবুব আলম বলেন, আটক শিবির নেতাকর্মীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা সুস্থ্য হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লুৎফর রহমান বলেন, “যেকোনো সংঘটন যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, এবং প্রক্টরিয়াল বডি সদা প্রস্তুত আছে এবং থাকবে”।
উল্লেখ্য যে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে মিটিং করছিলেন ১৬জন শিক্ষার্থী। তাদের দেখে শিবির সন্দেহ হলে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফ করিম রুপম ও আইন অনুষদে সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম বিষয়টি উর্ধ্বতন নেতাদের জানান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান এহসান, মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাদেরকে তুলে বঙ্গবন্ধু হলে নিয়ে হলের ২৩১ ও ২৩২ নম্বর কক্ষে নিয়ে তাদেরকে ৪ ঘন্টা ধরে বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৬ জনের মধ্যে ৯ জনের শিবির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন তারা। বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ