নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট রাবি। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়,চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারউদ্দীনকে দায় মুক্তি প্রদানের প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৭:৩০ এ মশাল মিছিল ডাকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। একই সময়ে ছাত্র শিবিরের একটি আনন্দ মিছিল পরিবহন মার্কেটে বামপন্থীদের আড্ডার স্থলকে ঘিরে বারবার প্রদক্ষিণ করতে থাকে। আমরা তাদের কর্মসূচি সমাপ্ত হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকি। এবং তাদের সমাবেশ শেষ হওয়ার পরে ৪৫ মিনিট বিলম্বে ৮:১৫ তে মিছিল শুরু করি। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র শিবিরের প্রচার সম্পাদক নওসাজজামান, ছাত্র মিশনের জিএ সাব্বির সহ আরো অনেকের নেতৃত্বে আনুমানিক ২০০ জনের একটি মব আমাদের দিকে তেড়ে আসে এবং অতর্কিত ইট পাটকেল, চেয়ার ও লাঠি ছুঁড়ে মারতে শুরু করে। আমরা উত্তেজিত না হয়ে, সংঘর্ষ এড়িয়ে মিছিল নিয়ে সামনে অগ্রসর হই। পরবর্তীতে মিছিলটি নিয়ে আমরা বুদ্ধিজীবী চত্ত্বর সংলগ্ন প্যারিস রোডে পৌছালে আরো দুই দফা হামলা করা হয়। এ সময় আমরা প্রায় সকলেই এলোপাথাড়ি ইট, পাটকেলের মাধ্যমে আঘাত প্রাপ্ত হই। ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি লাথি ঘুষি মারা হয় এবং বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক তারেক আশারাফকে ইটের আঘাতে রক্তাক্ত করা হয়।
২৪ পরবর্তী ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কায়দায় এই ভয়াবাহ সন্ত্রাসী আক্রমণের বিচার চাইতে আমরা প্রক্টর অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই প্রক্টরিয়াল বডি চা চক্রে বসে সিসিটিভি ফুটোজ দেখছিলো। এতোবড় হামলা ঘটনা ঠেকানোর তারা কোন চেষ্টাই করেনি। পরিবহনে হামলা পরে আরো দুই দফা হামলা করা হয়। প্রক্টরিয়াল বডি তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিলে আমাদের সহযোদ্ধারা এভাবে রক্তাক্ত হতোনা।
প্রক্টরিয়াল বডি শুরুতে একটা পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলাকে মারামারি হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। হামলাকারীদের সঙ্গে কথা না বলে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয় বলে জানায়। শুধু তাই নয় যে গোষ্ঠীটি বিনা উস্কানিতে আমাদের উপরে সন্ত্রাসী হামলা করেছে, যে গোষ্ঠীটি আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হত্যা যোগ্য করে তুলতে চায়, তাদের সঙ্গে আমাদেরকে সাংলাপে বসানোর চেষ্টা চালায়। যেন এটি সন্ত্রাসী হামলা নয়, কোন দৈনন্দিন দ্বিপাক্ষিক ঝগড়া।
আমরা সন্ত্রাসী হামলার বিচার এবং নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিই। আমাদের দাবি ছিলো ভিসির উপস্থিত হয়ে এই সন্ত্রাসী হামলার বিচার এবং আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিবেন। পরবর্তীতে ভিসি রাজশাহীতে নেই জানতে পেরে ভিসির অনুপস্থিতিতে সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বতন কর্মকতা দুই প্রোভিসির উপস্থিতি দাবি করি। কিন্তু ঐ সময় প্রোভিসিদের প্রত্যেকেই প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান করা সত্ত্বেও আমাদের খোঁজ নিতে এগিয়ে আসেনি। বরং প্রোভিসি (শিক্ষা) ফরিদ উদ্দীন খান অবস্থান চলাকালীন আমাদেরকে পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক ভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান। এই ঘটনায় আমরা প্রশাসন বিরোধী স্লোগান দিতে থাকলে প্রোভিসি (প্রশাসন) মাঈনুদ্দীন সল্প সময়ের জন্যে আমাদের সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। এসময় আমরা নিজেদের নিরাপত্তা চাইলে তিনি বলেন আমাদের জন্যে বিশেষ কোন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ওনাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আওয়ামি ফ্যাসিবাদী আমলের প্রশাসনকে দেখতাম ছাত্রলীগের সন্ত্রাসকে প্রত্যক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে। আজ অভ্যুত্থান পরবর্তী রাবি প্রশাসনকেও আমরা দেখতে পেলাম ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সমর্থন যোগাতে। যেন এটাও ফ্যাসিবাদী আমলের সেই দলীয় প্রশাসন, কেবল দলটা ভিন্ন। অভ্যুত্থান পরবর্তী রাবি ক্যাম্পাস আওয়ামি ফ্যাসিবাদী আমলের সেই দমবন্ধকারী পরিস্থিতে ফিরে যাক তা আমরা চাই না। প্রশাসন যদি অবিলম্বে হামলাকারী শিবির সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা না করে। সেক্ষেত্রে আমরা এই প্রশাসনকে সন্ত্রাসীদের তাবেদার মনে করে অপসারণ চাইতে বাধ্য হবো। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,
কাউসার আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ, ছাত্র ইউনিয়ন রাবি সংসদ। তারেক আশরাফ, আহবায়ক, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন। শাহরিয়ার আলিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিপ্লবী ছাত্র-মৈত্রী। নাসিম সরকার, ছাত্রগণমঞ্চ, আহবায়ক, রাবি। ফুয়াদ রাতুল, আহবায়ক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।
বিএ..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।