দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহার ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী (১৮ ফেব্রুয়ারি) উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ড. জোহা: ছাত্র-শিক্ষক সম্প্রীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় স্যার জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে উদ্ভিদবিজ্ঞান
বিভাগের লেকচার থিয়েটারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস) এই সভার আয়োজন করে।
সভায় কবিকুঞ্জের সভাপতি ও তৎকালীন ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রামানিক বলেন, ড. জোহাকে সবাই চিনতেন, তিনি জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি সর্বোচ্চ মানবিক আচার-আচরণ দিয়ে ছাত্রদের মন জয় করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ছাত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এখানের শিক্ষকেরা বলেন ‘শিক্ষক দিবস’। আমরা কিন্তু এটাকে ‘ছাত্র-শিক্ষক দিবস’ হিসেবেই জানি। ড. শামসুজ্জোহা গুলিতে আহত শুনে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র নূরুল ইসলাম নগরের সোনাদীঘির কাছে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তার ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার মাথার ঠিক মাঝখানে গুলি করলে তিনি ড. জোহার আগেই মৃত্যুবরণ করেন।
সভায় সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহমদ সফিউদ্দীন বলেন, সেদিন ড. জোহা শহীদ না হলে, সারা দেশে গণঅভ্যুত্থান না হলে পাকিস্তানিরা হয়ত বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই করত। তাহলে আর আজকের বাংলাদেশ হতো না। ড. জোহা শহীদ হয়েছিলেন। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্র নূরুল ইসলাম ও আব্দুস সাত্তার শহীদ হয়েছিলেন। আজ আমরা তাদের অনেককেই ভুলে গিয়েছি। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারিকে আমরা কিন্তু কেবল শিক্ষক দিবস নয়, ছাত্র-শিক্ষক দিবস হিসেবে দাবি করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে দাবি তুলেছি যে, ১৮ ফেব্রুয়ারি কেবল জাতীয় শিক্ষক দিবস নয়। জাতীয় শিক্ষক দিবস মানে কিন্তু কেবল শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা। আমরা হয়ত অনেকেই জানি না, সেদিন ড. জোহার সঙ্গে সঙ্গে একজন ছাত্রও প্রাণ দিয়েছিলেন। একজন ছাত্র মারা যাচ্ছে তার জন্য শিক্ষক এগিয়ে আসছেন। আবার একজন শিক্ষক মারা যাচ্ছেন তার জন্য ছাত্র প্রাণ দিচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষকের সম্প্রীতির এই বিষয়গুলো বর্তমানে আমরা তেমন একটা জানার চেষ্টা করি না। এই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, ড. জোহার মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী পরেও কেন আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। তবে এটি কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি প্রজন্ম বা একটি
নির্দিষ্ট সময়ের ঘটনা নয়। এটি সারা দেশের ছাত্র-শিক্ষক সম্প্রীতির একটি নিদর্শন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক। এটি বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়েছে।
দুই পক্ষ থেকেই মূল্যবোধগুলো আবার জাগ্রত করতে হবে।
প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, একজন মানুষের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান তার নিজের জীবন। ড. জোহা ছাত্রদের রক্ষার্থে নিজের জীবন দিয়ে
অতুলনীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের ব্যুরোপ্রধান রফিকুল ইসলাম বলেন, ড. জোহা কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারা দেশকে রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সাবেক সভাপতি মুস্তাফিজ রনি, বর্তমান সভাপতি শাহীন আরম, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক রনজু হাসান এবং হ্যালো রাজশাহী ম্যাংগোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল অন্তিকাম বন্ধন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান ও সদস্য রাজিয়া সুলতানা, সভাপতিত্ব করেন সভাপতি শাহীন আলম। সভার আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল ‘হ্যালো রাজশাহী ম্যাংগো’।
এস/আর