নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাত পোহালেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যেই ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজশাহীর বিভিন্ন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছেছে ভোটগ্রহণের যাবতীয় সরঞ্জাম। সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীর মানুষেরও নজর এখন নির্বাচনের দিকে। নানা কারণে আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে রাজশাহী। চলতি মাসের ১১ থেকে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে প্রচার-প্রচারণা। প্রত্যেক দলের প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালালেও রাজশাহী-২ সদর আসন বাদে বাকি ৫টি আসনে তেমনভাবে প্রচারণা করতে পারেনি বিএনপি প্রার্থীরা। তারপরও রাজশাহীর ৫টি আসনে প্রার্থী থাকা দলটি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। একটির প্রার্থীতা আদালত বাতিল করায় রাজশাহী-৬ আসনে প্রার্থীশূণ্য হয় বিএনপির। প্রার্থী শূন্য
আসনে তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। প্রত্যেকটি আসনের প্রার্থীরা নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতেই নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। আর ছয়টি আসন মিলে এবার নতুন ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯০৫ জন। সবচেয়ে বেশি নারী ভোটার রাজশাহী-২ সদর আসনে বেশি। এই আসনে পুরুষের চেয়ে ৬ হাজার ৩৮ জন নারী ভোটার বেশি। যে কারণে এবার ভোটের মাঠে নারী ভোটারও বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার রাজশাহীর ছয়টি আসনে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৪২ হাজার ৫৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটর ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭১০ জন এবং নারী ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫২ জন। দশম সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীতে মোট ভোটার ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৭ জন। এবার নতুন ভোটার হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯০৫ জন। রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আমিনুল হক ও আ’লীগের প্রার্থী রয়েছেন ওমর ফারুক
চৌধুরী। ব্যারিষ্টার আমিনুল হক তিনবারের এমপি ও দুই বারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি ভোটে অংশগ্রহণ করেননি এবং ২০১৪ সালে বিএনপি ভোট বর্জন করায় তিনি অংশগ্রহণ করেননি। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত ওমর ফারুক চৌধুরী। এরপর ২০১৪ সালেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দুই প্রার্থী জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫২ জন। নারী ১ লাখ ৯২ হাজার ৭২৩ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯০ হাজার ৬১৯ জন। এ আসনে নতুন ভোটার ৪০ হাজারের বেশি। এছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল মান্নান ও বাসদের আলফাজ হোসেন।রাজশাহী মহানগর এলাকা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-২ সদর আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর রাসিকের মেয়র ছিলেন এবং ৫ বছর এমপি ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি কারাগার থেকে ভোট করে হেরে যান এবং ২০১৪ সালে দল ভোট বর্জন
করায় তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। এ ছাড়া আরো প্রার্থী রয়েছে, সিপিবির এনামুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফয়সাল হোসেন এবং নৌকা প্রতীকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি ২০০৮ সালে জোট থেকে এমপি নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৫২ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৭ জন। এই আসনে ৬ হাজার ৩৮ জন নারী ভোটার বেশি। এ আসনে নতুন ভোটার রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার। নতুন ও নারী ভোটারদের ভোটও নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল হক মিলন, আ’লীগের প্রাথী নৌকা প্রতীকে রয়েছেন আয়েন উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলুর রহমান, যুক্তফ্রন্টের মনিরুজ্জামান স্বাধীন ও সাম্যবাদী দলের সাজ্জাদ আলী। প্রার্থী ৫ জন থাকলেও আ’লীগ ও বিএনপির মধ্যে লড়াই হবে। এ আসনে নারী ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৪০ ও পুরুষ ভোটার
১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৫ জন। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন সাবেক এমপি আবু হেনা ও আ’লীগের এনামুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তাজুল ইসলাম খান। এ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮ জন। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৭ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১১ জন। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, আ’লীগের ডা. মনসুর রহমান, জাকের পার্টির শফিকুল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রফিকুল ইসলাম। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১ হাজার ৬৭৬ জন। যার মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২২৮ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫১ হাজার ৪২৭ জন। রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে আ’লীগের প্রার্থী রয়েছেন শাহরিয়ার আলম ও
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুস সালাম সুরুজ। বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবু সাইদ চাঁদ। কিন্ত আদালতে তার প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় এ আসনে বিএনপির প্রার্থী শূণ্য হয়ে পড়ে। ফলে তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪ হাজার ২৯৮ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৯৭ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৬০১ জন। রাজশাহীর মানুষের নজর এখন ভোটের দিকে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের মাধ্যমে সকল জল্পনা ও কল্পনার অবসান ঘটবে।
খবর ২৪ ঘণ্টা/আর