বিশেষ প্রতিবেদক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহী জেলার ৬টি আসনেই কম বেশি ভোটের আমেজ বিরাজ করলেও বিভিন্ন কারণে আলোচিত রাজশাহী-৪ বাগমারা আসন ভোটকে কেন্দ্র করে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বিরোধী নেতাকর্মীরা পুলিশের হাতে আটক হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার দলীয় এমপির নেতাকর্মীরা বিএনপি দলীয় প্রার্থী ও সাবেক এমপি আবু হেনার সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যেই ভোটকে কেন্দ্র করে আলোচিত এই জনপদে দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার গাড়ী বহরে দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ক্রমেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। যদিও হামলা পরবর্তী রাজশাহী মহানগরীর একটি আবাসিক হোটেলের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তার নির্বাচনী গাড়ী বহরে হামলার জন্য বর্তমান এমপি এনামুল হককেই দায়ী করেছেন। তিনি ওই সংবাদ
সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তাকে ভোটের প্রচার-প্রচারণা থেকে দুরে রাখতেই বর্তমান এমপি এনামুল হকের মদদেই তার উপর দফায় দফায় হামলা করা হয়েছে। তারা হামলার করে তার নির্বাচনী ৫টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও গাড়ী ভাংচুর করেছে ও কয়েকজনকে আহত করেছে। আরো অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও এমপির সকল সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন আ’লীগের এমপি প্রার্থী। পুলিশকে দিয়ে একের পর এক তার নেতাকর্মীকে আটক করে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করছে পুলিশ। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার বিকেলে ভবানিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুর রাজ্জাককে আটক করে পুলিশ। নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে বিএনপির এই নেতার উপর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বাগমারা জুড়ে পোস্টার আর ফেস্টুনে ছেয়ে ফেলেছেন আ’লীগ সমর্থিত এমপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। তার তুলনায় খুব কম পরিসরে
পোস্টারিং করা বিএনপি প্রার্থী আবু হেনার পোস্টার যেটুকু রয়েছে সেগুলোও তুলে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে। গ্রেফতার এড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভয়ে প্রচারণা চালাতে পারছেননা। এ ছাড়া নৌকা সমর্থক কর্তৃক হয়রানির ভয়েও তারা মাঠে নামতে পারছেনা বলে একাধিক বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে বর্তমানে বাগমারার জনপদ প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে উঠছে।খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, রাজশাহী-৪ বাগমারার এ আসনটিতে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। এরমধ্যে একজন হলেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু হেনা ধানের শীষ প্রতীকে, আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক নৌকা প্রতীকে ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী তাজুল ইসলাম খান হাতপাখা প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বিএনপি প্রার্থী আবু হেনা প্রচারণা শুরুর দিন থেকে দিনভর ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
এমপি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন করা হবে এমন কথা বলে ভোটর দাবি করছেন তিনি। তবে দীর্ঘদিন পর আবু হেনা ভোটের মাঠে আসায় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তারাও নিজ নিজ পাড়া-মহল্লায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে পুলিশি আতঙ্কের কারণে খুব বেশি সুবিধা করতে পারছেন না তারা। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবু হেনা সুষ্ঠ ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এদিকে, বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন বাগমারা উপজেলা। একটি উপজেলা নিয়েউ গঠিত এই আসন। এই আসনে তিনি বর্তমানে এমপি পদে রয়েছেন। তিনিও নেতাকর্মী নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করছেন ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। তিনিও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।আরো জানা গেছে, ভোটকে কেন্দ্র করে এই জনপদ এখন দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দ্ইু দলের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা চাইবে নির্বাচনী জয়লাভ করতে। এ জন্য তারা প্রচার-প্রচারণা ও ভোটারদার কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা অব্যাহত রাখবে।
প্রথম দিকে পরিবেশ ঠান্ডা থাকলেও দিন দিন সেই পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তবে ওই এলাকার ভোটাররা সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে ভোট দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। যাতে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী তাজুল ইসলাম হাতপাখা প্রতীক নিয়ে বাগমারা এলাকায় পোস্টারিং করেছেন। তবে তার পোস্টারে ছবি ব্যবহার করা হয়নি। অন্য প্রার্থীদের তুলনায় তুলনামুলক কম পোস্টার দেখা গেছে। তিনিও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন। তিনিও এ আসন থেকে ভোটারদের সমর্থন নিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এ জন্য প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।এ বিষয়ে বিএনপি আবু হেনা বলেন, আমার নেতাকর্মীরা ভয়ে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। পুলিশের হাত থেকে হয়রানি হওয়ার ভয়েও অনেকে প্রচারণায় বের হতে পারছেন না। তারপরও ভোটের মাঠ ছাড়া হবে না। জয় আমাদের হবেই। আ’লীগ
মনোনীত এমপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮ জন। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৭ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১১ জন। এ আসনেও পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বেশি। প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে নারী ভোটারদের ভোট পাওয়ার বিকল্প কিছু নেই। নারীদের ভোটের সমর্থন যে প্রার্থী বেশি পাবে তিনি জয়ের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
খবর ২৪ ঘন্টা/আর