বিশেষ প্রতিবেদক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ইতিমধ্যেই প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই ভোটের আলোচনা। রাজশাহী জেলার (পবা-মোহনপুর) উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসন। দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় পিছিয়ে নেই এই আসনটি। সর্বত্রই চলছে ভোটের আলোচনা। তবে হঠাৎ করেই এ আসনটির নির্বাচনী এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত ১৯ তারিখ বিকেলে মোহনপুর উপজেলা যুবদলের সভাপতি বাচ্চু রহমানকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে গুলি করার ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশ্য দিবালোকেই তাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়াও বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে , ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী পোস্টার কেটে ফেলা, নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর ও ধানের শীষ সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।
রাজশাহী-৩ আসনে এবার মোট এমপি প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন। এরমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল হক মিলন লড়ছেন ধানের শীত প্রতীকে, আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন নৌকা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ফজলুর রহমান হাতপাখা, সাম্যবাদী দলের সাজ্জাদ আলী ও যুক্তফ্রন্ট এবং এলডিপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুজ্জামান স্বাধীন লড়ছেন কুলা প্রতীক নিয়ে। প্রার্থীদের মধ্যে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিন থেকে পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও এলাকায় এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ আসনে প্রার্থী তিন জন হলেও মুল লড়াই হবে বিএনপির প্রার্থী এ্যাড. শফিকুল হক মিলন ও আ’লীগের প্রার্থী আয়েনের মধ্যে। এই বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যেই মুল লড়াই হবে। দুটি দলের
প্রার্থীই প্রচারণা শুরুর দিন থেকে ভোটের মাঠে সরব।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি মনোনীত প্রাথী শফিকুল হক মিলন চলতি মাসের ১১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। আসনের দুটি উপজেলাতেই প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই পোস্টারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা। পবা-মোহনপুর উপজেলা বিএনপি অধ্যুষিত হওয়ায় নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে সাড়াও পাচ্ছেন ব্যাপক। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামে গামে গিয়ে গণসংযোগ করছেন তিনি। ভোটারদের কাছে এলাকার উন্নয়নের বার্তা দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তিনি। ভোটাররাও তাকে সমর্থন করছেন। তবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিন থেকে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক কর্তৃক ধানের শীষের পোস্টার, ফেস্টুন ও নির্বাচনী অফিস ভাংচুরসহ নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করা হচ্ছে। সর্বশেষ যুবদলের সভাপতি বাচ্চু রহমানকে তুলে নিয়ে গিয়ে দুই পায়ে গুলি করার ঘটনা ঘটে। তিনি এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরপর থেকে এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই ভয়ে বিএনপির প্রচার-প্রচারণায় যুক্ত হচ্ছেন না। কিছু ঘটনা ছাড়াও প্রচার-প্রচারণায় সরব বিএনপির প্রার্থী। তারা এ আসনে বিপুল ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। মিলন প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচন করছেন। এর আগে তিনি নির্বাচন করেন নি। এ আসনে আ’লীগের প্রার্থী আয়েন উদ্দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে শুরুর দিন থেকে প্রচার-প্রচারণা করছেন। পোস্টার ও আর ফেস্টুন ছেয়ে দিয়েছেন তার নির্বাচনী এলাকা। তিনিও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। এমপি থাকাকালে ৫ বছরে পবা-মোহনপুরে তার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন। আয়েন উদ্দিন ২০১৪ সালের নির্বাচনে মেরাজ উদ্দিন মোল্লাকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আবারো এমপি নির্বাচিত হলে উন্নয়নের প্রতিশ্রতি দিয়ে
ভোট প্রার্থনা করছেন তিনি। এ ছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনের জন্য রাত-দিন প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনিও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এ আসনে আরো প্রার্থী রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ফজলুর রহমান। তিনি হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই সরব ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। তবে তিনি পোস্টারে ছবি ব্যবহার করেন নি। আরো প্রার্থী রয়েছেন সাম্যবাদী দলের প্রার্থী সাজ্জাদ আলী। এ প্রার্থীকে ভোটের মাঠে খুব সক্রিয়ভাবে দেখা যায়নি। এ ছাড়া প্রার্থী রয়েছেন যুক্তফ্রন্ট ও এলডিপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুজ্জামান স্বাধীন। তিনি নিজ এলাকা খড়খড়ির আশেপাশে কিছু পোস্টার লাগিয়েছেন। তিনিও অন্য দুই প্রার্থী চেয়ে তুলনামুলক কম হলেও
প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কয়েকদিন আগে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তবে তার পোস্টার ও ফেস্টুন তেমন দেখা যায়নি। ইশতেহার ঘোষণার সময় তিনি বলেছিলেন, পোস্টার ফেস্টুন ছাড়াও প্রচার-প্রচারণা চালানো যায়। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৫ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৪০ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৫ জন। এই আসনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে নারী বড় ফ্যাক্টর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কারণ পুরুষের তুলনায় নারীও ভোটারেও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তাই যেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হোক না কেন নারী ভোটারের ভোটের সমর্থন পাওয়াও জরুরী।
খবর ২৪ ঘণ্টা/আর