নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রীন, ক্লিন ও হেলদি সিটি হিসেবে সুপরিচিত রাজশাহী মহানগর মশার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। গরমের শুরুতেই মশার তীব্র উৎপাতে দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টাতেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অতিষ্ঠ নগরবাসী মশার কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট সহ বিভিন্ন মশক নিধন সামগ্রী ব্যবহার করেও পরাস্থ করতে পারছেনা মশা বাহিনী কে। শহরের ড্রেনগুলো নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার না করায় ড্রেনগুলোতে পানির কোনো প্রবাহ নেই। ময়লা স্তুপের কারণে পানির প্রবাহ না থাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। যার ফলে ড্রেনের জলাবদ্ধ নোংরা পানিতে কিলবিল করছে মশার লার্ভা।
রাসিকের তথ্যমতে, নগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এসব ড্রেন ও তার আশপাশের এলাকায় ব্যবহার করা হয় লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড নামে মশা নিধনের দুই ধরনের ওষুধ।
এইদিকে৫ই আগষ্টের পর নগরীর বেশিরভাগ ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিরা অনুপস্থিত থাকায় রাসিক এর মশক নিধন কর্মসূচিতে ধীরগতি লক্ষ্যনীয়। মশক নিধন ওষুধ স্প্রে না করা, নিয়মিত ড্রেন ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করা সর্বপরি মশার প্রজনন মৌসুমের ফলে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে মশার উপদ্রব।
রাজশাহী নগরীতে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, দিনের বেলায় খোলা জায়গায় বসে থাকলেও মশার ভনভন শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন মানুষ। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মশার এ উপদ্রব বেড়ে যায় কয়েকগুণ। মশার এই তীব্র উৎপাতের ফলে নগরবাসীর জীবনে যুক্ত হয়েছে আরও একটি ভোগান্তি। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, হাসপাতালের রুগী ও রুগীর স্বজন, বৃদ্ধ ও শিশুরা। মশার উপদ্রব এতোটাই বেশি যে দিনের বেলায়ও মশার কয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে, টাঙাতে হচ্ছে মশারি। বাসাবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিপণিকেন্দ্র গুলোতে মশার ভনভনানি শব্দ ও কামড়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে ইফতারি ও সেহরির সময় মানুষ মশার জ্বালায় নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়ছেন।
রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা মো: আলতাব বলেন, “মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।অনিচ্ছাসত্ত্বেও দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা মশার কয়েল জ্বালিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এতে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ”
মহানগরের কোর্ট মহিষবাথান এলাকার বাসিন্দা রূপোষ ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে না। ড্রেন পরিষ্কার করা নাই, ঝোপঝাড় পরিষ্কার ঠিক মতো করছে না। এই জন্যই মশার এত উপদ্রব। ”
হোসনীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ফাউমি বলেন, এত মশার জ্বালাতন আগে কখনো টের পায় নি। মশার অত্যাচারে জানালা, দরজা একটূও খোলা যাচ্ছে না। ”
রাজশাহী কলেজের সমাজকর্মের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিম জানান,” ক্লাসের মধ্যেও মশার উৎপাত সহ্য করতে হচ্ছে। মশার কামড়ে অনেক সময় ক্লাসে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে।”
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরাও মশার উপদ্রবে তাদের ভোগান্তির কথা জানান। তারা জানান মশার কামড়ে নিচ তলার রুগী ও রুগীর স্বজনরা ঠিক মতো ঘুমাতে পারেন না।
নগরবাসীর অভিযোগ সিটি করপোরেশনে মেয়র ও কাউন্সিলর না থাকায় কোনো রকম তদারকিও নেই। আসলে মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম খুবই ঢিলেঢালা ভাবে চালানো হচ্ছে।
তবে সিটি কর্পোরেশনের দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দাবি মশার লার্ভা নিধনের জন্য নিয়মিত লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড স্প্রে করা হচ্ছে। রাসিক এর উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু জানান, লার্ভিসাইড, অ্যাডাল্টিসাইড কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমাদের দক্ষ কর্মী রয়েছেন যারা মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
রাজশাহী সিটিকর্পোরোশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার বলেন, ‘মশা এখন বেড়েছে তা ঠিক। কারণ এখন এদের প্রজনন মৌসুম চলছে। তাছাড়া বাড়ির পাশের ঝোপঝাড় অনেকে পরিষ্কার রাখনছেন না। ছাদবাগানের টবের পানি থেকেও বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। এসব ব্যাপারে নগরবাসীকে একটু সচেতন থাকতে হবে। তাহলে মশার সংখ্যা কমবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শহরে মশা তুলনামূলক কম। অন্য শহরে এখন আপনি দাঁড়াতেই পারবেন না। আমরা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মেয়র-কাউন্সিলর থাকলে তদারকিটা ভাল হয়। এখন তারা নেই। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্বে আছেন। তাদের আরও অনেক কাজ থাকে। তারপরও যতটা সম্ভব আমরা সব তদারকি করছি।’
রাসিক সূত্র মোতাবেক ২০২৩ এর ২রা ফেব্রুয়ারি রাসিকের কাছে সরবরাহ করা হয় এক হাজার লিটার লার্ভিসাইড ও ৬০০ লিটার অ্যাডাল্টিসাইড। রাসিকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মশক নিধনের জন্য মাত্র ১০০ লিটার লার্ভিসাইড ও ২০০ লিটার অ্যাডাল্টিসাইড মজুত আছে, যা পুরো নগরীর জন্য অপ্রতুল। তবে ওষুধের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ জানায়, মশা দমনে রাসিককে প্রতিবছর ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার লার্ভিসাইড ও ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকার অ্যাডাল্টিসাইড কিনতে হয়। এসব প্রয়োগ ও কেরোসিন ডিজেল মিলে গড়ে প্রতিবছর মশা মারতেই রাসিকের খরচ হয় এক কোটি টাকা।
জনাব মামুন বলেন এখন রাসিকে লার্ভিসাইড ওষুধ ও ফগার মেশিনের ওষুধের মজুত খুবই কম। ওষুধ কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। রোববার দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। পরে ওষুধ এলে মশক নিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।