ঢাকাবুধবার , ৬ জুলাই ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৭০ বছরে পদার্পণ

মামুন আবদুল কাইউম
জুলাই ৬, ২০২২ ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আজ ৬ জুলাই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৭০ বছরে পদার্পণ করছে।

দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের গগন শিরীষ গাছগুলোর মতো দেশের শিক্ষা ও গবেষণায় বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। লক্ষ্য ছিল উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সামনে নেওয়া।

১৯৪৭ সালে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবির পর ১৯৫০ সালে রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি হয়। ১৯৫২ সালে শহরে এক জনসভায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোর দাবি তোলা হয়। পরে তৎকালীন আইনসভার সদস্য মাদার বখশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়। প্রফেসর আইএইচ জুবেরীকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজে এর ক্লাস শুরু হয়।

সাতটি বিভাগ আর ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের পরিকল্পনায় মতিহারের সবুজ চত্বরের নিজ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হানাদার বাহিনীর হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা শহিদ হওয়ায় দেশের ইতিহাসে প্রথমবার যুক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হবিবুর রহমান, মীর আবদুল কাইয়ুম, সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাড়াও ত্রিশজন ছাত্র, কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহিদ হন। বর্তমানে এর বিভাগ ৫৯টি এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।

দীর্ঘ ৬৯ বছরের পথচলায় দেশবরেণ্য জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞানী ড. এনামুল হক, বিজ্ঞানী পিটার বার্টচি, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, প্রফেসর হাসান আজিজুল হক, প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা, প্রফেসর অরুণ কুমার বসাক, প্রফেসর বদরুদ্দীন উমরের মতো শিক্ষক এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একসময়ের এলামনাই, ছাত্র রাজনীতি, সহশিক্ষায় সম্পৃক্তরা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ও করছেন। হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট এখন দেশ-বিদেশের মাটিতে স্ব স্ব ক্ষেত্রে আলো ছড়াচ্ছেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণাকে বিশ্ব মানের করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। ’৭৩-এর অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে সিনেট ও রাকসু অকার্যকর রাখায় ছাত্র রাজনীতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিকে ভূলুষ্ঠিত করেছে। সংকট নিরসনের প্রচেষ্টার পরও শিক্ষার্থীদের আবাসন, বিভাগের শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষকদের চেম্বার সংকট অব্যাহত রয়েছে।

আশার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা এসেছে। তবে মাঝেমাঝেই হলে শিক্ষার্থী নির্যাতন, আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে বাধা দেওয়ার প্রবণতার সংবাদ বেশ কয়েকবার শিরোনাম হয়েছে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এসব বিষয় শক্ত হাতে দমন করা।

সেই সঙ্গে বর্তমান প্রশাসন আরও মানসম্মত গবেষণা, বহির্বিশ্বের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লিঙ্ক প্রোগ্রাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রান্ডিং পুনরুদ্ধার ও বাড়ানো, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্টে আরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলামনাইদের কর্মের মাধ্যমে স্বমহিমায় যুগ যুগ ধরে টিকে থাকুক। সব বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে এগিয়ে চলুক। শুভ হোক প্রাণের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন।

মামুন আবদুল কাইউম : সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।